ঢাকা: ভারতের বহু লোক কর্মসূত্রে ইরাকে থাকেন। দেশটিতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ চলছে।
একারণে ইরাকে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে সোমবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ওই বৈঠকের জন্য পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলিতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তা ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নয়াদিল্লিতে ওইসব দেশের রাষ্ট্রদূতেরা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইরাক থেকে ভারতীয়দের সরাতে সে দেশে তিনটি ক্যাম্প অফিস খোলা হয়েছে। যে ভারতীয়রা দেশে ফিরতে চাইবেন তাঁদের পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিয়ে সাহায্য করা হবে।
মুখপাত্রটি জানান, কারও বিমানের টিকিট কেনার টাকা না থাকলে টিকিটও কিনে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার থেকে উত্তর ইরাকের তিকরিতের ভারতীয়দের সরানোর কাজ শুরু হবে। সে দিনই ভারতে ফিরবেন ৪০ জন। উদ্ধারকাজের জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার তিনটি বিমান তৈরি রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, উপসাগরীয় দেশগুলিতে ভারতীয়দের সাহায্য করতে আলাদা তহবিল রয়েছে নয়াদিল্লির। ইরাকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সেই তহবিলের কিছু অংশ বাগদাদের ভারতীয় দূতাবাসে পাঠানো হবে।
তবে মসুলে অপহৃত ভারতীয়দের নিয়ে কোনও নতুন খবর দিতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার কয়েক জন অপহৃতের আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে দেখা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সুষমা বলেন, বাগদাদ থেকে আমাদের রাষ্ট্রদূতের পাঠানো রিপোর্ট দেখিয়েছি ওঁদের। রিপোর্ট পড়ে ওঁরা সন্তুষ্ট।
নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার বাসিন্দা অপহৃত খোকন শিকদার। এদিন তাঁর স্ত্রী নমিতা শিকদার বলেন, যে কোনও উপায়ে আমার স্বামীর খোঁজ পেতে চাই। তিনি জানান, দিন কয়েক আগে সরকারি লোক এসে তাঁদের নাম, ঠিকানা সব নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তার পরে আর কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
মাস দু’য়েক আগে শেষ বার বাড়িতে টাকা পাঠিয়েছিলেন খোকন। সেই টাকা প্রায় শেষ। কিন্তু টাকা নয়, পরিবারের সকলে চাইছেন যে ভাবেই হোক ফিরে আসুন খোকন। তার জন্য যা প্রয়োজন তার সবই করতে রাজি আছেন তাঁরা।
নদিয়ার আর এক বাসিন্দা সমর টিকাদারের স্ত্রী দীপালি স্বামীর মোবাইলে ফোন করেন। সোমবার সকালে সেই ফোনে রিং হয়। দীপালি বলেন, হঠাৎই একবার আমার স্বামীর ফোনটা বেজে ওঠে। ফোন ধরে ও পার থেকে কেউ আরবিতে কিছু বলে। তার পর কেটে দেয় ফোন। আমি বুঝতে পারিনি। তার পর থেকে আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে ফোনটি।
এদিকে মস্কো আইএসআইএল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নুরি অল-মালিকি সরকারের হাত শক্ত করতে পাঁচটি সুখোই যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে তারা।
বাগদাদে সব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকে নিয়ে নয়া সরকার গঠনে জোর দিচ্ছে আমেরিকা। তার আগে ওয়াশিংটন ইরাকের লড়াইয়ে খুব বেশি জড়াতে রাজি নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
ফলে ইরাককে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিতেও তারা গড়িমসি করছে বলে জানিয়েছে মালিকি সরকার। এই পরিস্থিতিতে পাঁচটি সুখোই-২৫ বিমান পাঠিয়ে রাশিয়া ওয়াশিংটনকেই বার্তা দিতে চেয়েছে বলে ধারণা কূটনৈতিক শিবিরের।
সঙ্কটের সময়ে বাগদাদের পাশে থাকায় ভবিষ্যতে ইরাকে রাশিয়ার প্রভাব বাড়তে পারে বলেও মনে করেন কূটনীতিকরা। গতকাল উত্তর ইরাকে তিকরিত থেকে আইএসআইএলকে হটিয়ে দেওয়ার দাবি করেছিল ইরাকি সেনা।
কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিকরিতে এখনও লড়াই চলছে। তবে শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে জঙ্গিদের হটিয়ে দিয়েছে ইরাকি সেনা। তিকরিত থেকে আরও উত্তরে সামারার দিকেও এগিয়েছে সেনাবাহিনী।
ইরাক-সিরিয়ায় তাদের প্রভাবাধীন এলাকায় সোমবার ‘খলিফার রাজত্ব’ শুরুর কথা ঘোষণা করেছে আইএসআইএল। তাদের প্রধান আবু-বকর আল বাগদাদিকে ‘খলিফা’ বলে ঘোষণা করেছে তারা।
ইরাকের প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার অল-আসাদের বিরুদ্ধেও লড়ছে আইএসআইএল। সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কাছে আল-বাব ও আলেপ্পো প্রদেশের ডেইর হাফের গ্রামে ন’জনকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে তারা।
সূত্র: বিদেশি পত্রিকা
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৪