ঢাকা: কলকাতায় বসেই পুনের জার্মান বেকারিতে বিস্ফোরণের নীলনকশা চূড়ান্ত করা হয়েছিল, এ কথা কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাক্স ফোর্স (এসটিএফ)-কে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি জাহিদ হোসেন।
জার্মান বেকারি বিস্ফোরণের আগে শেষ বৈঠকটি হয় কলকাতায়।
কোন কায়দায় বিস্ফোরণ করা হবে, বিস্ফোরণের সময়টি কী হবে সবই এই বৈঠকে ঠিক হয়।
এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, জেরায় এমনটাই জানিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন এর এই সদস্য।
শুধু এই বিস্ফোরণই নয়, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বিহারের পাটনায় নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থলে এবং তার আশপাশে যে বিস্ফোরণের ঘটনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেই খবরও ছিল জাহিদ হোসেনের কাছে।
পুনের বিস্ফোরণের জন্য বিস্ফোরক পাচার করার কাজ করে জাহিদ ৩০ লাখ রুপি পায় বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন। তার দাবি মতো এই অর্থ দিয়ে সে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা শুরু করে। সেই সুবাদেই তার পাকিস্তানের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে।
এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গসহ পাশের আরও দুটি রাজ্যে বিভিন্ন লোককে জাহিদ ‘একে’ ধরনের রাইফেল এবং অস্ত্র সরবরাহ করেছে।
জাহিদের ‘লিঙ্ক ম্যান’ হিসেবে কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার এক গরু পাচারকারীর সন্ধান মিলেছে। গরু পাচারের আড়ালে মুর্শিদাবাদের এই পাচারকারী অস্ত্র আমদানির কাজ করতো।
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ এবং নদীয়া সীমান্তে জঙ্গি জাহিদ হোসেনের বেশ কয়েকজন ‘লিঙ্ক ম্যান’ আছে। যারা গরু পাচার এবং সোনা পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এসটিএফ এর গোয়েন্দাদের জেরায় এই কথা স্বীকার করেছেন জাহিদ হোসেন।
আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। যেটা বেশ কিছুটা অবাক করেছে গোয়েন্দাদের। গত ছয় মাস আগে একটি বড় মাপের অস্ত্রের লেনদেন হয় পশ্চিমবঙ্গে। কলকাতার এক ব্যক্তির হাতে সেই অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়।
জেরায় গোয়েন্দারা জেনেছেন, জুলাই মাসের শেষেই পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন যুবককে পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক সীমা পার করে ভারতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব ছিল জাহিদ হোসেনের।
অস্ত্র এবং এবং জাল নোট পাচারের কাজ করতেন জাহিদ হোসেন। এসটিএফ সূত্রে জানা গেছে, এই কাজে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ জাল নোট এবং অস্ত্র চোরাচালানে কম অর্থ পাওয়া যেত। তার থেকে অনেক বেশি অর্থ পাওয়া যেত জঙ্গিদের মাধ্যমে বিস্ফোরক পাচারের কাজ করে।
মহারাষ্ট্র পুলিশের মাধ্যমে জানা গেছে, বেশ কিছু বছর আগে অস্ত্রসহ মহারাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হন জাহিদ হোসেন। মহারাষ্ট্র পুলিশের ধারণা, তখন সে ছোটোখাটো অস্ত্র কেনাবেচা অথবা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলো। সম্ভবত তখনও জঙ্গিদের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ ছিল না।
এরপর থেকেই ভারতীয় পুলিশের নাগালের বাইরে চলে যান জঙ্গি জাহিদ।
এসটিএফ চেষ্টা করছে যত দ্রুত সম্ভব জাহিদ হোসেনকে জেরা করে আরও তথ্য বের করতে।
আশা করা হচ্ছে, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সেকেন্ড ইন কমান্ড তেহেসিন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল জাহিদ হোসেনের।
তার নির্দেশেই সম্ভবত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিদের পশ্চিমবঙ্গের সীমা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল জাহিদ হোসেন।
তবে তদন্তের গতি-প্রকৃতি দেখে ধারণা করা যায়, ধৃত এই জঙ্গির যোগাযোগের জাল অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। আর সেই জালকেই গুটিয়ে আনার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৪