ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের বন্ধু প্রণব মুখার্জির সঙ্গে ।। নঈম নিজাম

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৪
দেখা হয়েছিল বাংলাদেশের বন্ধু প্রণব মুখার্জির সঙ্গে ।। নঈম নিজাম প্রণব মুখার্জি ও নঈম নিজাম

ঢাকা: দিল্লিতে এবার কঠিন গরম পড়ছে। ১১ জুলাই দুপুর ১২টায় নামলাম ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে।

কড়া রোদের আবহাওয়া ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোনো মতে গাড়িতে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দিল্লির এক সাংবাদিক বন্ধু বললেন, আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। শীতের সময় কঠিন শীত। আর গ্রীষ্মে তীব্র গরম। এবার তাপমাত্রায় রয়েছে আগুনের হলকা।

এই তাপমাত্রায় সারতে হবে কাজগুলো। বন্ধুবান্ধব ও প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করা। হোটেলে যাওয়ার আগেই তালকাটরা সড়কে দেখা করতে গেলাম এক রাজনীতিক বন্ধুর সঙ্গে। তিনি লোকসভার সদস্য। অপরাহ্ন ৩টার মধ্যে তার সঙ্গে দেখা শেষ করে হোটেলে ফেরার পথে ফোন আসে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে। টেলিফোনকারী বললেন, আমি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বলছি। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে আপনার সাক্ষাতের সময়সূচি ঠিক আছে। তবে এই মুহূর্তে গাড়ির নম্বরটি দরকার। আপনি যে গাড়িতে আসবেন নম্বরটি বলুন। বললাম, আমি রওয়ানা হওয়ার আগেই গাড়ি নম্বর জানাব।

ঘড়ির কাঁটা ৭টায় পৌঁছে গেলাম রাষ্ট্রপতি ভবনে। নিরাপত্তা তল্লাশি শেষ করে বসলাম অতিথি কক্ষে। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন প্রতিষ্ঠা করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। শাসনকার্য সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে কলকাতা থেকে দিলি্লতে বড় ধরনের ভবন নির্মাণের দরকার ছিল। তাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভাইসরয়ের জন্য এই বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়, যা প্রায় ৪ হাজার একর জমির ওপর নির্মিত। ১৯১২ সালের ১৪ জুন ভবনটির মূল নকশা হস্তান্তর করা হয়। ভবনটির স্থাপত্য নকশা তৈরিতে ব্রিটিশদের পাশাপাশি কাজ করেছেন কয়েকজন ভারতীয়ও। এ কারণে স্থাপত্যে ব্রিটিশ অবয়বের পাশাপাশি রয়েছে কিছু মোগল ধাঁচও। ৪ তলাবিশিষ্ট বিশাল রাষ্ট্রপতি ভবনে মোট ৩৪০টি ঘর রয়েছে। ভবনের ভিতরে রয়েছে নর্থ ড্রয়িং রুম, মিউজিয়াম, মারবেল হল, দরবার হল, ইয়োলো ড্রয়িং রুম, জয়পুর মিনার, ব্যাংক্যুয়েট হল ও অশোকা হল। এর মধ্যে ভবনের প্রাচীরের ভিতরে ছোট বড় বাগান ফোয়ারা রয়েছে অনেক। সবচেয়ে বড় বাগানটি হলো মোগল গার্ডেন। এই গার্ডেনের পাশে রয়েছে হারবাল গার্ডেন, যা বিভিন্ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ব্যবহার করা হয়। আর মোগল গার্ডেনে বিদেশি অতিথিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

আপ্যায়ন কক্ষে পরিচয় হলো পশ্চিম বঙ্গের দুজন দর্শনার্থীর সঙ্গে। তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। আদি বাড়ি বাংলাদেশ। দেশ ভাগের পর চলে গেছেন ওপারে। বাংলাদেশের মানুষ পেয়ে বয়স্ক মানুষটির আবেগ ঝরে পড়ে। কথায় আন্তরিকতা ভরা। এডিসি এসে তাদের নিয়ে গেলেন। তারা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কক্ষে প্রবেশ করতেই এডিসি আবার ফিরে এলেন। আমাদের নিয়ে গেলেন তার কক্ষে। সেখানে পাঁচ মিনিট বসতেই অনুমতি মিলল ভারতের রাষ্ট্রপতির কক্ষে প্রবেশের। কক্ষে প্রবেশ করতেই আন্তরিকতা নিয়ে বললেন, আসো। কাছে যেতেই নিজে ওঠে দাঁড়ালেন। হাত মেলালেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। তার কথা, আন্তরিকতা সবকিছু আগের মতো। কোনো পরিবর্তন নেই। হৃদয়ের উচ্ছ্বাস নিয়েই তিনি বাংলাদেশকে উপলব্ধি করেন।

শ্রী প্রণব মুখার্জি শুধু ভারতের রাষ্ট্রপতি নন, তিনি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তার রয়েছে বিশাল অবদান। বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছেন। কাজ করেছেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার দরজা ছিল খোলা। সেই দরজা এখনো আগের মতোই আছে। ভারতের মতো বিশাল দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, তারপরও কোনো কিছুর সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি। শুধু প্রণব মুখার্জি নন, তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের দরদও বাংলাদেশের জন্য অপরিসীম। প্রণব মুখার্জি ও তার পরিবার বাংলাদেশের চিরস্থায়ী বন্ধু। তার স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির বাবার বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইলে। ছেলে কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ মুখার্জিকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, নড়াইল গেছেন কখনো? বললেন, যাইনি। তবে বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম সফর করেছি।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রবেশ করি ভারতের রাষ্ট্রপতির কক্ষে। ৩০ মিনিটের সাক্ষাৎ ঘড়ির কাঁটা মেনে চলেনি। আন্তরিকতার ছোঁয়ায় গল্পে, আলোচনায় তা ৪০ মিনিটের ঘরে পৌঁছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই জানেন। পত্রিকার খোঁজ নিলেন। আমাদের মিডিয়া হাউস নিয়েও কথা হলো। আলোচনায় উঠে আসে উপমহাদেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। জিও পলিটিক্সে বাংলাদেশের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করলেন তিনি। ভারতের সংসদে তরুণদের জয়জয়কারের প্রশংসা করলেন। বললেন, তারুণ্য পারে অনেক কিছু করতে। বাংলাদেশ নিয়ে সব সময় তার আশাবাদ অনেক উঁচুতে। তাই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য শুভ কামনা করলেন তিনি। সময় খুব দ্রুত কেটে গেল। বিদায় নিলাম ভারতের সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের কাছ থেকে। ভারতীয় রাজনীতিতে প্রণব মুখার্জিকে বলা হতো ক্রাইসিস ম্যানেজার। আগে সংকট নিরসন করতেন কংগ্রেসের। এখন রাষ্ট্রপতির সম্মান ও শ্রদ্ধার আসন অলঙ্কৃত করে পথ দেখাচ্ছেন গোটা ভারতকে। গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার এই মানুষটির দীর্ঘায়ু কামনা করছি।


নঈম নিজাম, সম্পাদক,বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।