কলকাতা: ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনকে সামনের রেখে রাজ্যের নেতৃত্বকে ঢেলে সাজাবার পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি’র নবনিযুক্ত সর্বভারতীয় সভাপতি মোদী ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ।
বিজেপি সূত্রের খবর- আপাতত কিছুদিনের মধ্যে হতে চলা মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, দিল্লি’র মত রাজ্যগুলির ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও থেমে নেই পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে বিজেপি’র রাজনৈতিক পরিকল্পনা।
বরং পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে বেশ কিছু সমস্যাকে ইতিমধ্যেই তারা চিহ্নিত করেছেন। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে- প্রথমত পশ্চিমবঙ্গে এখনও জোরালোভাবে রাজনৈতিক কাজ কর্ম শুরু করা যায়নি।
বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করে দ্রুততার সঙ্গে এই কাজ করা দরকার। দ্বিতীয়তঃ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে যে বিষয়টি ভাবাচ্ছে তা হল, তাদের কাছে খবর যে কিছু রাজ্য নেতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাম্ভিক আচরণ করছেন। এটা একদমই পছন্দ নয় নতুন বিজেপি সভাপতির।
তৃতীয় বিষয় হিসেবে জানা গেছে- বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গে কাজ শুরু করতে হবে শূন্য থেকে। তাই দরকার নতুন এবং সর্বজন গ্রহণীয় একজন নেতা। আর সেই লক্ষ্য ধরে দলের মধ্যে নেতা বাছার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।
ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের বেশ কিছু কর্মীর বিজেপি দলে যোগদানের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্তরের অন্যান্য দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে বিজেপি নেতৃত্ব।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টক্কর দেবার মত একজন মহিলা নেত্রীর সন্ধ্যান চলছে বিজেপি’র অন্দর মহলে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহল মনে করছেন সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের বড় অংশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন বলিউডের গায়ক বাবুল সুপ্রীয়। জনগণের সঙ্গে মিশে যাবার এবং তাদের কাছে পৌঁছে যাবার বাবুল সুপ্রীয়ের সহজাত সক্ষমতা নজরে পড়েছে রাজ্যের শীর্ষ এবং বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের।
সংসদ সদস্য হবার পর থেকেই সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি না পাওয়ার জন্য আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রথম থেকেই যোগাযোগ রেখে চলেছেন বাবুল সুপ্রীয়। কলকাতায় এক ঝটিকা সফরে এসে চাকরি প্রার্থীদের ধর্না মঞ্চে হাজির হন। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথাও বলেন।
অপরদিকে তার উপস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার হাওড়ার শিবপুরের শতাব্দী প্রাচীন প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টি্টিউট অফ সাইন্স-এর কর্মী সংগঠনের এক বিরাট অংশ বিজেপিতে যোগদান করে। এর ফলে সংগঠনের রাশ হাতে চলে আসে বিজেপি’র। বিগত দিনে এই কর্মী সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করত তৃণমূল কংগ্রেস।
ভোটের প্রচারে বাবুল সুপ্রীয়ের নির্বাচনী কেন্দ্রের সভায় নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন ‘মুখে বাবুল আছিয়ে, আপ লোগ মুঝে বাবুল লো। ’ এতে আশা তৈরি হয়েছিল মন্ত্রী সভায় জায়গা পাবেন ‘পাশের বাড়ির ছেলে’ ইমেজের বাবুল সুপ্রীয়।
কিন্তু কিছুটা হতাশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গবাসী। আর এটা বিলক্ষণ জানেন নরেন্দ্র মোদী। আর সেই কারণেই রাজ্যে বাবুল সুপ্রীয়কে সামনে নিয়ে আসতে পারেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে বাবুল সুপ্রীয়কে হয়তো রাজ্যের মধ্যে বেঁধে নাও ফেলতে পারে বিজেপি। সেক্ষেত্রে অন্য কোন রাজ্য নেতাকে সামনে আনতে পারে বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব।
নতুন নেতাদের তুলে আনার ক্ষেত্রে বিজেপি’র যথেষ্ট সুনাম আছে। এর বড় নিদর্শন স্মৃতি ইরানী, বরুণ গান্ধী, মিনাক্ষী লেখি, শাহাবাজ হুসেন প্রমুখ। এখন দেখার পশ্চিমবঙ্গ থেকে নতুন মুখ হিসেবে কাকে সামনে নিয়ে আসে বিজেপি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৪