অনন্যা এক্সপ্রেস (আজমীরগামী ট্রেন, ভারত) থেকে: ‘দ্রুত করেন, এই নিন রুটি, এই চিকেন। তাড়াতাড়ি ১৩০ রুপি দিন।
যা বলা তাই কাজ। রুটি-চিকেন রেখে দ্রুতই টাকা দিলাম। চোখের পলকে আরেক বগিতে হারিয়ে গেলেন রাজু চ্যাটার্জি। এভাবে প্রতিদিন ট্রেনে ট্রেনে খাবার বিক্রি করে সংসার চালান রাজু। বয়স ৩০/৩২ হবে। সংসারে রয়েছে মা, স্ত্রী ও এক সন্তান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রাজুর কাঁধেই সংসারের পুরো ভার।
পশ্চিমবঙ্গের আসানশোলের বাসিন্দা শুধু রাজুই নন, তার মতো আরো শতশত যুবক, তরুণ এভাবে ট্রেনে খাবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। খাবার ছাড়াও কেউ জুতা কালি, কেউ পানীয়-চকলেট বিক্রি, কেউ তালা-চাবি, চেইন, বই, কেউবা বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করছেন।
রাজুর মতো প্রত্যেক যুবক মানে একেকটি পরিবার, একেকটি স্বপ্ন। আর এ স্বপ্নের জাল বোনা হয় ট্রেনের ওপর ভর করে। এ ট্রেনই রাজুর লাইফলাইন।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারতে ট্রেনকে বলা হয়, ‘লাইফলাইন অব দ্যা নেশন’।
রেলওয়ে বিভাগে ১৩ লাখের বেশি মানুষ কাজ করেন। ১৩ লাখের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রতিটি পরিবারের আরো লাখ লাখ সদস্যের জীবন। এর সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে লাখ লাখ রাজুর জীবনও।
১৮৪৮ সালে ভারতবর্ষে এক কিলোমিটারও ট্রেনপথ ছিল না। লন্ডন থেকেই ভারতে রেলপথ তৈরির বীজ বোনা হয়। ১৮৫৩ সালে মুম্বাই থেকে থানেতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে রেলওয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ভারতবর্ষে। ১৮৫৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ব্রিটিশ প্রকৌশলী রবার্ট মেইটল্যান্ডের মাধ্যমে দ্রুতই ভারতবর্ষে ছয় হাজার ৪০০ কিলোমিটারের রেলপথ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। তার কল্যাণে মুম্বাই থেকে কলকাতা সরাসরি রেলযোগাযোগ চালু সম্ভব হয়েছিল।
সেই রেলপথের জালে আজ জড়িয়ে আছে পুরো দেশটি। সবদিকেই হাজার হাজার কিলোমিটারের রেলপথ নেটওয়ার্কে বিস্তৃত ভারত। দূরন্ত এক্সপ্রেস, রাজধানী এক্সপ্রেস, অনন্যা এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস, ইন্টারসিটি সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন এক্সপ্রেস ট্রেন হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে ছুটে চলেছে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে।
কলকাতার শিয়ালদহ রেলস্টেশনে নেমে সেটি বুঝতে কষ্ট হয়নি। শতশত মানুষ ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। দিল্লী, জয়পুর, আজমীর, আহমেদাবাদ, ব্যাঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দারাবাদসহ বিভিন্ন শহরে যেতে ভিড় করছেন এসব মানুষ। দূর-দূরান্তে যেমন মানুষ যাচ্ছেন তেমনি স্থানীয়ভাবে এক প্রদেশের ভেতরে যেতেও রয়েছে লোকাল ট্রেন।
১৭টি রেলওয়ে জোনে বিভক্ত ভারতের রেলসেবা খাত থেকে বছরে রাজস্ব আয় হয় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেল নেটওয়ার্কের অধিকারী ভারত রেলের মাধ্যমে যাত্রী ছাড়াও বিশাল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করে থাকে। দিনে দিনে আধুনিক হচ্ছে দেশটির রেল সেবা।
আধুনিক ইলেকট্রিক ট্রেনের পাশাপাশি অতীত ঐতিহ্যও ধরে রেখেছে দেশটি। তাইতো পাহাড়ে দার্জিলিংয়ের রেলওয়ে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৪
** আহমেদাবাদের কাপড় জগতে নয়া মনীষা রাণী!
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...
** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল
** দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো,ঢাকা মেট্রো কবে
** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব
** ৩৬ ঘণ্টার বিচিত্র রূপ!
** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে
** সেই তো আমরাই!
** দিল্লি কত দূর?
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা
** গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা