কলকাতা: কল্লোলিনী তিলোত্তমা কলকাতার আজ ৩২৫তম জন্মদিন। জোব চার্নকের আগমণের সময় থেকে এতগুলি বছর পেরিয়ে জীবন্ত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এই কলকাতা।
শহরের আদৌ কোন জন্মদিন হয় কিনা সেই নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন আছে। যে কোনো শহর ইতিহাসের চলমান সাক্ষী। তাই কোনো একটি দিন তার জন্মদিন বলে নির্ধারিত করা প্রায় অসম্ভব।
তবে আজ থেকে ৩২৫ বছর আগে ১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট এক মেঘলা দিনে কলকাতার মাটিতে পা রেখেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলা জোব চার্নক।
সেই দিনটিই পালিত হয়ে আসছে কলকাতার জন্মদিন হিসাবে। যদিও কেউ কেউ এর বিরোধিতা করে বলেন, চার্নক সাহেব আসার আগেও কলকাতায় মনুষ্যবসতি ছিল। ফলে তিনি কলকাতা শহরের জনক, এটা ঠিক নয়।
এর প্রমাণ হিসেবে সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের জমিদারির মধ্যে থাকা তিনটি গ্রাম সুতানটি, গোবিন্দপুর এবং কলকাতার বিভিন্ন ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য গোটা উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় আজও দেখা যায়।
কিন্তু এটা ঠিক যে, আধুনিক চেহারার কলকাতা বা ‘কোলোনিয়াল’ কলকাতা বলতে যা বোঝায়, তার শুরুটা করেছিলেন জোব চার্নক-ই।
ক্রমশ কলকাতাকে ঘিরে গোটা এশিয়ায় ব্রিটিশ শাসন আবর্তিত হয়েছিল।
ইতিহাস বলছে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জেতার পর বাঙলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার যে বিপুল সম্পদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয়েছিল, তা দিয়ে কলকাতার উন্নয়নের কাজ শুরু হয়।
বলা যায়, সেই সময় থেকেই সুতানটি, গোবিন্দপুর, আর কলকাতা এই তিনটি পল্লী মিলে বৃহত্তর কলকাতার নগরায়ন শুরু হয়।
১৭৭২ সালে তৎকালীন বড়লাট লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস সুবে বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে সরিয়ে আনেন কলকাতায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী।
এতদিন শুধু বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল গঙ্গাতীরের শহর কলকাতার। হেস্টিংসের এই সিদ্ধান্তে কলকাতার রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক গুরুত্বও বেড়ে যায়।
১৯১১ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত ভারতবর্ষের রাজধানী ছিল কলকাতা।
১৯৪৭ এর দেশভাগের পর বিরাট শরণার্থীর ভিড় আছড়ে পড়েছিল এই শহরের বুকে। এরপর ৭০ এর দশকে কলকাতা একদিকে ছিল নকশাল আন্দোলনে উত্তাল অন্যদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করেছিল তিলোত্তমা।
কলকাতার ৩২৫তম জন্মদিন উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হচ্ছে। আর এই জন্মদিনে কলকাতাবাসীর একটাই চাওয়া, ভারতের সেরা শহর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করুক কল্লোলিনী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ২৪ আগস্ট, ২০১৪