ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বাসভাড়া বৃদ্ধিকে স্বাগত জানাল কলকাতাবাসী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪
বাসভাড়া বৃদ্ধিকে স্বাগত জানাল কলকাতাবাসী ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা: ইতিহাসের নজির ভেঙ্গে বাসের ভাড়া বৃদ্ধিকে স্বাগত জানালো কলকাতার নাগরিকরা। সম্ভবত কলকাতার ইতিহাসে এই প্রথম যাত্রীরা বাসের ভাড়া বৃদ্ধিকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানালেন।



সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাস মালিকদের বৈঠকের পর ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে জানা হয়েছে, প্রতি ধাপে ১ রুপি করে বৃদ্ধি পাবে বাসের ভাড়া।

কিন্তু বাসের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে যাত্রীদের অসন্তোষ তো দূরের কথা, তারা বরং একে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, এই ভাড়া বৃদ্ধি আগেই করা উচিৎ ছিল।

সাধারণত ভাড়া বৃদ্ধির ফলে যাত্রীরা অখুশি হন। অনেক সময় তারা প্রতিবাদে পথে নামেন। কিন্তু এবার এ সবের কিছুই দেখা যায়নি শহর কলকাতায়।

প্রতি ১৬ কিলোমিটারে ধাপে ১ রুপি করে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাসে উঠলেই দিতে হবে ৬ রুপি। প্রশাসনের তরফ থেকে জানান হয়েছে, ডিজেলের দাম বাড়লে আবার বাসের ভাড়া পর্যালোচনা করা হবে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাস-ট্রামের ভাড়া বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে বহু আন্দোলন–সংগ্রামের সাক্ষী কলকাতা।

১৯৫৩ সালে ডা. বিধান চন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ব্রিটিশ মালিকানাধীন কলকাতা ট্রাম ওয়েজ কোম্পানির মাত্র ১ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছিলো। এর বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল কলকাতা।

তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ব্যাপকভাবে বাস-ট্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছিলো। আজও ১৯৫৩ সালের সেই ঘটনার কথা বারবার পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ঘুরেফিরে আসে।

কিন্তু কী এমন হলো যে, ৬১ বছর বাদে কলকাতাবাসী অর্থনীতি, ইতিহাসের ধারাকে একেবারে উল্টে দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে বাসভাড়া বৃদ্ধিকে।

ছয় দশকের ব্যবধানে মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তনের সুলুক সন্ধান করতেই বাংলানিউজ  মুখোমুখি হয়েছিল কলকাতার বাসে, অফিসযাত্রীদের ।

দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জের একটি বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারত অফিসযাত্রী সুমন রায় জানালেন, বাসের ভাড়া বাড়ায় তিনি খুশি। কারণ এর ফলে লোকসানের বোঝা এড়াতে বসে যাওয়া বাসগুলি আবার চালু হবে। ফলে শহরে বাসের অভাব কমবে।

তাহলে কী বলাজায় বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিগত দিনের আন্দোলনগুলি ভুল ছিল? সুমন রায়ের জবাব, না তা নয়, আসলে পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে কলকাতার জনগণের চিন্তা-ভাবনা।

যেখানে ‘সাবসিডি’ নিতে অভস্ত্য ছিল মানুষ সেখানে তারা বুঝেছে অপ্রয়োজনীয়  ‘সাবসিডি’ আসলে ক্ষতি করছে গোটা দেশের অর্থনীতিকে। তাই শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাসভাড়া না বাড়ানোর বিরুদ্ধে তাদের মত প্রকাশ করেছে কলকাতাবাসী।

কলকাতার রাসবিহারী অঞ্চলে বাসের লাইনে দাঁড়ানো এক নিত্যযাত্রী জানালেন, বাসভাড়া বৃদ্ধিকে তারা যত না স্বাগত জানাচ্ছেন, তার থেকে বেশি হাঁফ ছেড়ে বাঁচার একটা অনুভূতি তাদের মধ্যে হচ্ছে।

তার মতে, বাসের আকালের ফলে একদিকে যেমন যাত্রী পরিষেবার ক্ষেত্রটি ভেঙ্গে পড়েছিল অন্যদিকে দৌরাত্ম্য বেড়েছিলো অটো (সিএনজি) ও ‘প্রাইভেট’ গাড়ির চালকদের।

যদিও বাস মালিকদের সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, এই ভাড়া বৃদ্ধি বাস ব্যবসাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে সাধারণ শয্যায় প্রতিস্থাপন করা হলো। রোগের সম্পূর্ণ চিকিৎসা করা হলো না। তবুও মনে করা হচ্ছে, লোকসানের বোঝা কমাতে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাসগুলি আবার পথে নামবে।

১ সেপ্টেম্বর থেকে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে।

কলেজছাত্রী সীমা দত্ত জানালেন, কলকাতার বড় অংশের বাস বসে যাওয়ায় অন্যান্য যানবাহনে যাতায়াতের জন্য খরচা অনেক বেশি হচ্ছিল। তবে বাসভাড়া বাড়ায় তার আশা এই সমস্যার সমাধান হবে। তবে তার মতে এই সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হলে অনেক বেশি সুবিধা হতো শহরবাসীর।

প্রসঙ্গত: বাস মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে এর আগে বহুবার বৈঠক করেছিলেন পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র। তবে সেই বৈঠকগুলিতে ‘মা-মাটি-মানুষ’ এর সরকারের নীতি বজায় রেখে সাড়ে তিন বছরে বাসভাড়া বাড়ানোর আবেদনে সাড়া দেননি তিনি।

পরিবহন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী চান না মানুষের উপর বাসভাড়া বাড়ানোর ফলে কোনো চাপ নেমে আসুক।

তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সরকারি সিলমোহর আদায় করে নিলেন বাস মালিকদের সংগঠনের নেতারা।

শহরের একটা বড় অংশের বাস বসে যাওয়ায় তীব্র যাতায়াত সমস্যার মুখে পড়েছিলেন শহরবাসী। অনেকখানি চাপ বেড়েছিল মেট্রো রেল এবং অটো (সিএনজি) এর উপর। মনে করা হচ্ছে, বসে যাওয়া বাসগুলি শহরে নামলে কলকাতার জনজীবনে স্বস্তির নিশ্বাস পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ২৬ আগস্ট , ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।