ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

নর্মদার পানিতে স্বচ্ছ সবরমতি, মেঘনার পানিতে বুড়িগঙ্গা কবে?

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪
নর্মদার পানিতে স্বচ্ছ সবরমতি, মেঘনার পানিতে বুড়িগঙ্গা কবে? ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আহমেদাবাদ থেকে: নর্মদার পানিতে স্বচ্ছ সবরমতি। আগেই বলেছি আহমেদাবাদের আশীর্বাদ এই নদী দিয়েছে অনেক, কেড়েও নিয়েছে।

কিন্তু এখন এই নদী আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যালিটির শাসন মেনেছে।

নদী আজ বাঁধা কঠোর কংক্রিটে। সবরমতি নদীর তীর ধরে হাঁটলে নিউইয়র্কের হাডসন কিংবা লন্ডনের টেমস নদীকে মনে পড়বে সহজেই। ওই দুই নদীও কংক্রিটে বাঁধা পড়ে বিশ্বের দুটি শ্রেষ্ঠ নগরী উপহার দিয়েছে। আহমেদাবাদও আজ সেই পথে। তবে এখানে হাঁটতে হাঁটতে যে কোনও বাংলাদেশির মনে পড়বে বুড়িগঙ্গার কথাও। যার অস্বচ্ছ জল, পঁচা-পুতিগন্ধময় তীর আর তা জুড়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কারখানা ঢাকাকে দিয়েছে অস্বস্তি।

শত শত পর্যটকের জন্য সবরমতির তীর এখন আকর্ষণীয় জায়গা। এখানে ঘুরে এলে মনে স্বস্তি আসবেই। নদীর দুই ধার জুড়ে উঁচু কংক্রিটের পাড়। তবে সবুজে ঘেরা। সাড়ে ১০ কিলোমিটার জুড়ে আহমেদাবাদ নগরীকে সাতটি সেতুতে বেঁধেছে পূর্ব-আর পশ্চিমে। এই বাঁধনই এনে দিয়েছে অর্থনীতির শক্তি।

প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি, লাখ লাখ মানুষ এপার-ওপার হচ্ছে। যাচ্ছে পণ্য, আসছে পণ্য। যোগাযোগ উন্নয়নের সোপান, সেতো অর্থনীতিরই তত্ত্ব।

গুজরাটের সবচেয়ে বড় নদী এই সবরমতি। রাজস্থানের উদয়পুর জেলার ধেবার হ্রদ থেকে এর উৎপত্তি। আর আরবসাগরের উপকূলে গিয়ে মিশে যেতে এই নদী ৩৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত বয়ে গেছে।

সবরমতি নদীর ভৌগলিক অবস্থানের কৌশলগত উপকারিতা টের পেয়েছিলো ব্রিটিশ বেনিয়া। ফলে তাদের শাসনের গোড়ার দিকেই আহমেদাবাদ নগরীর রূপ পায়। সবরমতির তীর ধরে গড়ে ওঠে শিল্প। ধীরে ধীরে যে সংখ্যা শত-সহস্রে রূপ নেয়। যদিও আহমেদাবাদ গড়ে ওঠে ১৪১১ সালে সেই সুলতানি আমলে। সুলতান আহমেদ শেঠ যার প্রতিষ্ঠাতা।

এই শিল্প আহমেদাবাদকে অনেক সুনাম আর অর্থ দেয়। এই নগরী গুজরাটের বাণিজ্যিক রাজধানীর তকমাও পায়। ওদিকে এই নদীর তীর ধরেই গড়ে ওঠে সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এক নগর গান্ধীনগর। যা গুজরাটের রাজনৈতিক রাজধানীও বটে। এছাড়াও কৌশলগত অবস্থানের কারণে ভারত পিতা মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধে এই সবরমতির তীরে গড়ে তুলেছিলেন তার আশ্রম।

ভারতকে স্বাধীনতা দিতে তথা গুজরাটকে এ সময়ের বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ দুটি নগর উপহার দিতে সবরমতি তার বুক উজাড় করে দিলেও প্রতিদান হিসেবে সবরমতির কপালে জোটে বদনাম। ধীরে ধীরে এই নদী হয়ে ওঠে ভারতের সবচেয়ে দুষিত নদী।  

সেই বদনাম ঘোচাতেই নেওয়া হয় সবরমতি রিভারফ্রন্ট প্রকল্প। আহমেদাবাদ নগরীতে নদীর তীর কংক্রিটে বেঁধে তাকে মুক্ত করা হয় দূষণের হাত থেকে। আহমেদাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের বিশেষ এই প্রকল্পের নাম সবরমতি রিভার ফ্রন্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।

১৯৬১ সালে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হলেও এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় তার সাড়ে তিন দশক পড়ে ১৯৯৭ সালে। প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ১২শ’ কোটি রুপি। যা দিয়ে তৈরি হয় নদীর দুই তীরে ১০.৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধ। দুই তীর সবুজায়নে লাগানো হয়েছে সারি সারি গাছ। দুই তীরে বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি নদীতে প্রবাহিত করতে বসানো হয় বিশেষ পাইপ লাইন। দুই পাশে তৈরি করা হয়েছে হেঁটে বেড়ানোর রাস্তা। পর্যটনের জন্য এই নদী এখন আহমেদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ। ২০১২ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে যার উদ্বোধন করেন তখনকার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নদীর পানি স্বচ্ছ করতে সবরমতি নদীতে নিয়ে আসা হয়েছে নর্মদা নদীর পানি। নদীর তীরে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে বুড়িগঙ্গার কথা। মেঘনা থেকে পানি এনে এই নদী স্বচ্ছ করার কথা বলা হচ্ছে কতদিন ধরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শই তার বক্তৃতায় বলেন সেকথা।

কবে হবে স্বচ্ছ বুড়িগঙ্গা। কবে নগরীর পাশেই নদীর বুক জুড়ে খেলবে বালিহাঁস, যেমন দেখলাম সাবরমতির বুকে, সারি সারি বালিহাঁস উড়ছে, খেলছে। আর দেখা যাবে মাছেদের ঘাঁই। যা মৎস্য সম্পদের জন্যও হতে পারে বড় আধার।

সবরমতি সম্পর্কে আরও একটি কথা বলে রাখি, এই নদীই দিয়েছে প্রথম রবীন্দ্র সঙ্গীত উপহার। সে ইতিহাস যখন জানা গেছে, সে নিয়ে বিস্তারিত লেখার প্রত্যাশা রইলো।

** মোদীর হাতে ‘সবরমতি’র নতুন প্রাণ
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...

** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল

** দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো,ঢাকা মেট্রো কবে

** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব

** ৩৬ ঘণ্টার বিচিত্র রূপ!

** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে

** সেই তো আমরাই!
** লাইফলাইন অব ইন্ডিয়া
** দিল্লি কত দূর?
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা
** গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।