ঢাকা: চলতি বছরের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। এ লক্ষ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তবে এবার কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা চুক্তি সই করার ব্যাপারে মমতা যদি তার অবস্থানে অনঢ় থাকেন তাহলে পশ্চিম বঙ্গকে এড়িয়েই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকায় আসতে মোদি আগ্রহী। আর তিনি খালি হাতে বাংলাদেশ আসতে চান না। তিস্তার পানিবণ্টন ও স্থলসীমানা চুক্তির একটি সফল রূপ দিতেই তিনি আসবেন। সমাধান হবে কিছু অমীমাংসিত বিষয়ও। এ ব্যাপারে দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে ১৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেখানেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণপত্র মোদির হাতে তুলে দেবেন।
এদিকে, মোদির সফরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হাসিনা-মোদি বৈঠক হচ্ছে ২৭ সেপ্টেম্বর। এ বৈঠকের পরই সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এটাই হতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার প্রথম সাক্ষাৎ।
জাতিসংঘে স্থায়ী মিশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দুই নেতার বৈঠকের বিষয়টি উভয় পক্ষের কূটনৈতিক পর্যায় থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
কূটনৈতিকরা মনে করছেন বিগত মনমোহন সরকার যেভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে গেছে তার ব্যতিক্রম হবে না মোদি সরকারের আমলে। ভারত কোনো নতুন পররাষ্ট্র নীতিতে ঝুঁকছে না, প্রতিবেশি দেশগুলোর ক্ষেত্রেতো নয়ই, সে কথা বারবারই এসেছে সেদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে ২৭ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে কি কি বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হবে তা নিয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে আগেই আলোচনা করে নেবেন।
জেসিসি (জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশন) বৈঠকের মাঝেই তাদের বৈঠক হবে।
নিউইয়র্কেই দুই নেতা চমক দেখাতে পারেন এমন কথাও জানাচ্ছে সূত্রগুলো।
মমতাকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র সরকার তিস্তা চুক্তি করতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়ে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে স্থলসীমানা চুক্তি করতে হলে ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই কক্ষেই বিলটি পাশ করা বাধ্যতামূলক কিন্তু পানি চুক্তির জন্য কোন প্রদেশের সম্মতিও বা সংসদের বাধ্যবাধকতা নেই।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় তিস্তা নদীর পানির অন্যতম প্রধান উৎস সিকিম। তাই এ ক্ষেত্রে মমতার একার দাবি ধোপে টিকবে না বলেও যুক্তি রয়েছে এ নিয়ে আলোচনায়।
অন্যদিকে নিজের রাজ্যে নানাবিধ অব্যবস্থাপনা এবং প্রতিবেশি দেশের প্রতি তার বৈরি আচরণ এরই মধ্যে মমতাকে কড়া সমালোচনার মুখে ফেলেছে। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সংগঠিত সংহিংসতায় তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদের সম্পৃক্ততার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় মমতা কিছুটা বিপাকে রয়েছেন।
তাছাড়া মোদি সরকার তার নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করায় বিগত মনমোহন সরকারের মত নাজুক অবস্থায় নেই। বিজেপি, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টও তিস্তা চুক্তির পক্ষে আগেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর জেসিসি বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। জেসিসি বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর অংশগ্রহণকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের ফিরতি সফর হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।
এর আগে জেসিসির তৃতীয় বৈঠক ২০১৩ এর ফেব্রয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও ভারতের ওই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ দুদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৪