ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বর্ধমান বিস্ফোরণ: টার্গেট ছিল কলকাতা?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৪
বর্ধমান বিস্ফোরণ: টার্গেট ছিল কলকাতা?

কলকাতাঃ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পিছনে হাত রয়েছে কোনো জঙ্গি সংগঠনের। এই দাবি আগেই করেছিলো গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ।

বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত অন্যতম হোতা নিহত শাকিল গাজি এবং তার স্ত্রী রাজেরা বিবি জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

তবে অনেকেই মনে করছেন, এই বিস্ফোরক তৈরির প্রধান লক্ষ্য ছিল কলকাতা। উৎসবের মরশুমকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে জানিয়ে আসছিলো, জঙ্গিরা যাতায়াতের নিরাপদ পথ হিসেবে কলকাতাকে ব্যবহার করে আসছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি কার্যকলাপে কলকাতাযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু এই ধরনের চক্রান্তের কথা সম্ভবত আঁচ করতে পারেনি প্রশাসনও।

বিস্ফোরণের স্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে এক বছর পরে বিস্ফোরিত হবে এমন একটি ‘টাইম বোমা’।

সূত্রের খবর, গোয়েন্দারা জেনেছেন বিস্ফোরক তৈরি করার জন্য কলকাতার বড়বাজার এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, পাথরকুচি, অ্যামোনিয়া নাইট্রেট কেনা হয়েছিলো। তার যথেষ্ট প্রমাণও পেয়েছেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা দপ্তরের সতর্কবার্তা থাকলেও ‘আমেরিকান সেন্টার’ হামলার ঘটনার পর সেই ধরনের কোনো জঙ্গি হামলার মুখোমুখি হতে হয়নি কলকাতাকে। কিন্তু এই ঘটনা আগের সমস্ত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকেই বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে বিস্ফোরণের যোগাযোগের তত্ত্ব নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, ওসামা বিন লাদেন প্রতিষ্ঠিত আল কায়দার সঙ্গে যোগ আছে ভারতে গোপনে কাজ করে চলা ‘আল জিহাদ’ জঙ্গি সংগঠনটির। আর সম্ভবত ‘আল জিহাদ’ এই বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত।

প্রাথমিক তদন্তে বিস্ফোরণস্থল থেকে পাওয়া কাগজপত্র, মেমরি কার্ড, জিহাদি বই, লিফলেট থেকে সেই রকমই ধরণা করছেন গোয়েন্দারা।

মনে করা হচ্ছে, হ্যান্ড গ্রেনেডের পিন খুলে গিয়ে এই বিস্ফোরণ হয়েছে। আবার টাইম বোমার সময়ের গণ্ডগোলের ফলেও বিস্ফোরণ হতে পারে বলে অনুমান।

অন্যদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে দেওয়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জমায়তে-উল–মুজাহিদিনের এই ঘটনার পিছনে হাত আছে বলে জানিয়েছেন।

এদিকে এই ঘটনায় কওসর এবং হাশেম মোল্লা নামের দুই ব্যক্তিকে খুঁজছে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, কওসর বাংলাদেশের বাসিন্দা। বিস্ফোরক তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। হাশেম মোল্লা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। মোল্লা এ ঘটনায় নিহত শাকিল গাজির সহযোগী।

এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে খুব বেশি একটা বাইরে আসতেন না হাশেম মোল্লা। মাঝে মাঝে একটি সাদা গাড়ি এসে বেশ কিছু মালপত্র নিয়ে যেত। ওই বাড়ির নারীরা বাড়ির ছাদে কাপড় শুকাতে দিতে গেলেও বোরখা পড়ে যেতেন।

মনে করা হচ্ছে, শুধু বিস্ফোরক বানানোই নয়, রীতিমত গ্রেনেড বানাবার তালিম দেওয়া হতো ওই বাড়িতে।

গোয়েন্দাদের অনুমান, সম্ভবত ধৃত নারীদের এই তালিম দিতো জঙ্গিরা। ঘটনাস্থল থেকে ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা বোমার নকশা, জিহাদি প্রশিক্ষণের ভিডিও ছাড়াও আমেরিকার ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংসের ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, ৭ অক্টোবর, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।