ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

জঙ্গি মায়ের কোলেই থাকছে সন্তান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৪
জঙ্গি মায়ের কোলেই থাকছে সন্তান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: একজন তার বাবাকে চোখের সামনে বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে দেখেছে, আরেকজনের বাবা এখনও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এই দুই শিশুরা মা এখন বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তের অন্যতম সূত্র।



বুধবার যখন এই দুই নারী জঙ্গিকে সিআইডি’র প্রধান দপ্তর কলকাতার ভাবানি ভবনে নিয়ে আসা হয় তখন তাদের কোলে ছিলো দুই কন্যা সন্তান। শিশু দুটির গায়ে সাদার উপর ছাপা কাপড়ের সুতির জামা। কপালে কাজলের টিপ। যাতায়াতের ধকলের ফলে ক্লান্তির ছাপ তাদের মুখে। চোখে শূন্যদৃষ্টি। একজনের বয়স সম্ভবত এক বছরের একটু বেশি, অন্যজনের একটু কম।

বিস্ফোরণে ঘটনায় হয়তো চাপা মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে এই শিশুদের মধ্যে। জঙ্গিপনার সঙ্গে তাদের কোনো যোগ না থাকলেও ঘটনাচক্রে তারাও এখন মায়েদের সঙ্গে পুলিশের হেফাজতে।

সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের পর যখন প্রথম পুলিশ বর্ধমানের খাগড়াগাড়ের ওই বাড়িতে ঢুকে, তখন রক্তমাখা ঘরের এককোণে বসে ভাবলেশহীন মুখে শিশুদের আপেল খাওয়াচ্ছিলেন আমিনা এবং রাজিয়া। সেখান থেকেই তাদের আটক করে পুলিশ।

পরে জেরার সময় বাচ্চাদেরকে মায়েদের কোল থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন থানার কর্মীরা। কিন্তু শিশুরা অনবরত কান্না শুরু করে। ফলে বাধ্য হয়েই জেরার সময় মায়েদের কোলেই রাখতে হচ্ছে শিশু দুটিকে। খানিক বাদে বাদে শিশুদের খাওয়ানোর জন্য  আমিনা এবং রাজিয়াকে জেরা বন্ধ করতে হচ্ছে।

জেরার সময় ধমকও দিতে পারছেন না গোয়েন্দারা। কারণ মায়েদের ধমক দিলেই কেঁদে উঠেছে কোলে থাকা শিশু দুটি।

নিরপরাধ এই শিশু দুটিকে থানায় রাখা কতটা মানবিক? যদিও মায়েদের সঙ্গে রাখাটাই এই শিশুদের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

কারণ বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এবং তার পরের ঘটনা এই শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন এই শিশুদের জন্য আনা হচ্ছে তিন লিটার দুধ। এছাড়াও বেশ কিছু খেলনা নিজেরাই কিনে এনেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ হোসেন মির্জা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ীই শিশুদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাবা-মায়েদের উপরেই বেশির ভাগটা নির্ভর করে সন্তানদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু কি ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে এই দুই নিরপরাধ শিশুর?

সন্ত্রাসবাদ কি কেড়ে নিল তাদের শৈশব?

জঙ্গি মায়েদের কোলে থাকা শিশু দুটির চোখের শূন্যদৃষ্টিও হয়তো এই রকম কোনো প্রশ্নেরই উত্তর খুজছে?

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।