কলকাতা: কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) ভারতের লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এই রাজনৈতিক সমীকরণের কেন্দ্রে জাতীয় রাজনীতি থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই এ নতুন সমীকরণকে উসকে দিচ্ছে বলে মনে করছে ভারতীয় রাজনৈতিক মহল।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির মন্তব্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে এবং বিরোধীদের এ নিয়ে লোকসভায় কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না এই দাবিতে শুক্রবার জাতীয় কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস একসঙ্গে লোকসভার বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এ বিক্ষোভে আরো উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সংসদ সদস্যরা।
তবে এ বিক্ষোভে উপস্থিত হয়নি সিপিএম ও অন্যান্য বিরোধীদলগুলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যায়, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি’র সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রাখার রাজনৈতিক কৌশলের বাধ্যবাধকতার ফলেই এই বিক্ষোভে উপস্থিত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি।
অপরদিকে, সারাদেশে মাত্র ৪৪টি আসন পাওয়া কংগ্রেস জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান ফিরে পাবার জন্য এক সময়ের শরিক তৃণমূল কংগ্রেসকে কাছে পেতে চাইছে। কেননা শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ থেকেই লোকসভায় ৩৪টি আসন লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপি হাওয়া আটকাতে কংগ্রেসের কাছাকাছি থাকলে সুবিধার কথা অনুধাবন করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে থাকার বিষয়ে রাজি হয়েছেন, বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেস একই মঞ্চে চলে আশায় পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতেই এই সমদূরত্বের নীতি গ্রহণ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে বাকি বিরোধীদলগুলোও আলাদা মঞ্চ থেকে বিজেপি বিরোধিতার সুর তুলছেন। ৯টি আলাদা দল মিলে দিল্লিতে নতুন বিজেপি বিরোধীদল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরমধ্যে রয়েছেন- লালু প্রসাদ যাদব, নিতীশ কুমার, দেবেগৌড়াসহ মুলায়েম সিং যাদবদের মত নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সরাদেশে বিজেপি হাওয়াকে রুখতেই এই নতুন কৌশলে অবতীর্ণ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে তাদের এই কৌশলের অনেক অংশ জুড়েই আছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির প্রভাব।
এখন দেখার চলতি শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভায় বিজেপি তাদের পেশ করা বিলগুলো কিভাবে পাশ করিয়ে নেয়। কারণ রাজ্য সভায় বিল পাশ করাতে হলে তাদের বিরোধীদের একটি অংশের সমর্থন অবশ্যই দরকার।
তবে দিল্লিতে নতুন সমীকরণ স্পষ্টই পশ্চিমবঙ্গ দ্বারা প্রভাবিত এবং আগামী দিনে এটি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৪