কলকাতা থেকে: পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ৩৪ বছর ৭টি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর এবার অবশেষে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হতে চলেছে। শুক্রবার সকাল আটটায় ভোট গণনা শুরুর কিছু সময় পর থেকেই ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের প্রার্থীদের একে একে পরাজয়ের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।
বেলা একটার দিকে নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় দু’শ আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল জোট। সিপিএম নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট ৭০টির মতো আসনে এগিয়ে রয়েছে।
দুপুরের মধ্যেই অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায় বাম রাজত্বের অবসানের খবর। টেলিভিশনে এসব তথ্য জানতে পেরে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের সমর্থকরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। এদের অনেকেই মোটরসাইকেল, গাড়িযোগে বিজয় মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে কালীঘাটে হরিশমুখার্জি রোডের মমতার বাড়ির দিকে।
মমতা বাড়ি থেকে বের না হলেও তার পরিবারের সদস্যরা রাজ্যের মানুষদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র পার্থ চট্টপাধ্যায় দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে মমতা ব্যানার্জির বাড়ির সামনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘তৃণমূল নেত্রী এই জয়কে সাধারণ মানুষের জয় বলেই ঘোষণা করেছেন। ’
তিনি বলেন, ‘বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। নেত্রী নিজেই তা জানাবেন। ’
তিনি আরও বলেন, ‘জয় হলেও দলের সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। ’
এদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে রাজ্যের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা সুনীল কুমার গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলগুলোকে সংযত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ’
নির্বাচনে বামফ্রন্ট সরকারের মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ কয়েকজন জাঁদরেল কমিউনিস্ট নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রীরা নির্বাচনে ধরাশায়ী হচ্ছেন।
অন্যদিকে মৌলালীতে সিপিএমের কার্যালয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। বেলা সাড়ে দশটার দিকে মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু দলীয় কার্যালয়ে আসেন। কলকাতার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জরুরি বৈঠকে বসেন বলে জানা যায়।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যাদবপুর আসনে হেরে যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মণীষ গুপ্তের কাছে। মণীষ গুপ্ত কয়েক বছর আগেও রাজ্য সরকারের চাকরি করতেন, ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব।
এছাড়া উত্তর চব্বিশ পরগণার খড়দহ আসনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত হেরে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী নেতা অমিত মিত্রের কাছে। অমিত মিত্র ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘ফিকি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বহুল আলোচিত সিপিএম নেতা ও আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব হারছেন নাট্যকার ব্রাত্য বসুর কাছে। গৌতম দেব বৃহস্পতিবারও বলেছেন, তিনিই জিতছেন। এই গৌতম দেবকে সিপিএমের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে মূখ্যমন্ত্রীও বিবেচনা করা হচ্ছিল।
উল্লেখযোগ্যভাগে বামদের দুর্গ হিসেবে দীর্ঘ তিন দশকের পরিচিতি পাওয়া বর্ধমান, উত্তরের জেলাগুলো ও জঙ্গলমহলের মানুষ এবার পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। এই এলাকাগুলোতে হেরে যাওয়ার পথে থাকা বাম নেতারা হচ্ছেন পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী, পৌরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র, শিল্পমন্ত্রী নিরূপম সেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এই নির্বাচনে প্রার্থী নন। তিনি সংসদ সদস্য হয়ে ২০০৯ সাল থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে নির্বাচনে তার জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হবেন। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে ছয় মাসের মধ্যে কোনো একটি আসনে তাকে নির্বাচিত হতে হবে।
রাজ্যের ২৯৪ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেয় ২২৭টিতে, কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৬৫ এবং এসইউসিআই প্রার্থী দেয় ২টি আসনে।
অপরপক্ষে ক্ষমতাসীন বাম জোটের মধ্যে সিপিএম ২১১, ফরোয়ার্ড ব্লক ৩৪, আরএসপি ২৩, সিপিআই ১৪, সমাজবাদী পার্টি ৫, ডিএসপি ২, মার্ক্সবাদী ফরোয়ার্ড ব্লক ২, বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস ১, আরজেডি ১ এবং আরসিপিআই ১টি আসনে প্রার্থী দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১১