ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে দালাল থেকে সাবধান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৫
পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে দালাল থেকে সাবধান ছবি: বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে লম্বা লাইন। সেখানে পৌঁছাতেই হাতে ফর্ম দেখে এলোমেলো চুল আর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির একটি লোক এগিয়ে এলো।

আড়চোখে এদিক ওদিক দেখে আপনাকে নিম্নস্বরে বললো ‘আমাকে দিন, আপনি ফর্ম ভরতে পারবেন না। ভুল হলে সমস্যা হবে। ’

আপনি কিন্তু কিন্তু করছেন, ‍আবার ভাবছেন দেবেন কি দেবেন না। লোকটি আবার বললো, ‘ভুল হলে কিন্তু খুবই সমস্যা হবে। আমাকে দিন আমি তাড়াতাড়ি করে দেবো। আপনাকে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হবে না। ’  হয়তো ভাবলেন দিয়েই ফেলি, মাত্র কটা টাকার তো ব্যাপার। এই ভেবে আপনি ফর্ম তুলে দিলেন ওই লোকটির হাতে, ঠিক সেই মুহূর্তে অনেকটা না বুঝেই পড়ে গেলেন দালাল চক্করের ফাঁদে।
 
প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও, ভারতের ইমিগ্রেশন অফিসের কর্মকর্তারা অনেক চেষ্টা করে দালালচক্রকে কিছুটা প্রতিহত করতে পেরেছেন। কিন্তু লম্বা লাইনের সুযোগ নিয়ে দালালরা তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। সুযোগ বুঝে লুটে নিচ্ছে টাকা।

ইমিগ্রেশন অফিসের কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, তারা চেষ্টা করেন কোনোভাবেই যেন একজন যাত্রী দালালের খপ্পরে না পড়েন। এ কারণে তারা কীভাবে ফর্ম পূরণ করতে হবে সেটা বোর্ডে লিখে টাঙিয়ে দিয়েছেন।

তারপরও অনেকেই আছেন যাদের ফরম পূরণে সত্যি সমস্যা হয়। কেউ হয়তো বয়সের জন্য চোখে ভালো দেখতে পান না, কেউ হয়তো পড়ে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেন না। এছাড়াও রয়েছে আরও নানান সমস্যা।

ভারতের ইমিগ্রেশন অফিসের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ইমিগ্রেশন ফর্ম পূরণ করতে কোনো রকমের সমস্যা হলে তারা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারাই সাহায্য করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তারা দালাল নিয়ন্ত্রণে সব রকমের চেষ্টা করছেন। যাত্রীদেরও তারা দালালের ফাঁদে পা না দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
 
কিন্তু দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য এখানেই শেষ নয়। ইমিগ্রেশন শেষ করে আপনি বেরুতে বেরুতেই কেউ আপনার কাছে জানতে চাইতে পারে আপনার টাকা বা ডলার এক্সচেঞ্জ করার দরকার আছে কি-না। আপনি হয়তো ভেবেছেন পরে করবেন অথবা কলকাতা বা অন্য কোনো জায়গায় সুবিধা মতো সময়ে ডলার বা টাকা একচেঞ্জ করে নেবেন।

যদি আপনি এদের কথায় বিশ্বাস করেন তবে আপনি ফের পড়লেন দালালের খপ্পরে। এরা নিজেদের ইচ্ছামতো দামে আপনার ডলার একচেঞ্জ করে দেবে। সুযোগ নেই একাধিক দোকান ঘুরে দাম যাচাই করার।

কিন্তু জানা থাকা দরকার, সঙ্গে থাকা অর্থ যদি ‘এনডোর্স’ করিয়ে নিয়ে থাকেন তবে সারা ভারতের যে কোনো মানি এক্সচেঞ্জ থেকে আপনি ডলার বা টাকা রুপিতে ভাঙিয়ে নিতে পারবেন। সামান্যতম সমস্যায় পড়বেন না।

তবে দালালের খপ্পর এখানেও শেষ নয়। ফিরতি পথেও আপনি এদের খপ্পরে পড়তে পারেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিদেশে গেলে আপনি কিছু জিনিস কিনবেন। এর ফলে হয়তো আপনার ব্যাগ কিছুটা বেশি ভারীও হয়েছে। কেউ এসে আপনাকে চুপিচুপি বলতেই পারে, আপনাকে কাস্টমসের পরীক্ষায় পার করে দেবেন, দিতে হবে কিছু অর্থ। আপনিও হয়তো ভাবলেন কি দরকার, কিছুটা অর্থের মাধ্যমে যখন রেহাই পাওয়া যাচ্ছে! আপনি যে মুহূর্তে রাজি হয়ে গেলেন আপনি আবার পড়লেন দালাল খপ্পরে।

আপনার নিজের, পরিবার বা আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য কিছু নিয়ে গেলে কোনো সমস্যা করবে না কাস্টমস, যদি না ওই সব জিনিসের মধ্যে কোনো বেআইনি জিনিস থাকে।
তবে অবশ্যই প্রতিটি জিনিসের বিল নিজের কাছে রাখবেন। প্রয়োজনে বিল দেখাতে হতে পারে। অনেক সময় আপনি কোনো হোটেলে থাকলে তার বিল সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না। হোটেল বা কোনোকিছু কেনার বিল চেয়ে নিন। বিল না নেওয়াটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। আপনার কেনা জিনিসের বিল যত্ন করে নিজের কাছে রাখুন, যাতে প্রয়োজনে কাস্টমস পরীক্ষার সময় সেটা দেখাতে পারেন।

আশা করা যায় এই নিয়মগুলি মানলে আপনাকে আর কোনোভাবেই দালালের খপ্পরে পড়তে হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৫
ভিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।