কলকাতা: কলকাতার ‘স্ট্রিট ফুড’ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের কথা বলে। একদিকে যেমন চীনা খাবার চাউমিন, অন্য দিকে পরোটা আর কাবাবের হাত ধরে আসা রোল।
আবার অন্যদিকে চটপটে স্বাদের ফুচকা তো কিংবা গরম গরম ফিশ ফ্রাই। এসব বৈচিত্র্যের সঙ্গে নিজের জায়গাটি সগৌরবে ধরে আছে দক্ষিণ ভারতীয় খাবারগুলো।
দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের মধ্যে ধোসা, ইডলি এবং সম্বর বড়া কলকাতায় সবচে জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তার দু’টি প্রধান কারণ আছে বলও মনে করেন ভোজনরসিকরা।
তারা বলছেন, খাদ্যগুণ ও ভিন্ন স্বাদের জন্যই এসব স্ট্রিট ফুড বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে কলকাতার ‘স্ট্রিট ফুডে’ তেল মশলার পরিমাণ একটু বেশি-ই। যা দক্ষিণ ভারতীয় খাবারগুলোতে সাধারণত থাকে না।
কলকাতায় দক্ষিণ ভারতীয় খাবার কতটা জনপ্রিয় এই প্রশ্নের উত্তরে একজন বিক্রেতা জানালেন, কলকাতার নিউ মার্কেটের উল্টো দিকে ধোসা, ইডলি, সম্বর বড়া বিক্রি করেন তিনি। বিক্রি কম করে হলেও প্রতি সন্ধ্যেতে অন্তত ৬০০টি ধোসা বানানো হয়।
উৎসবের কেনাকাটা চলতে থাকলে সেটা দ্বিগুণ এমনকি তিন গুণও হয়। এটা শুধু ধোসার হিসেব। এর সঙ্গে আছে ইডলি, সম্বর বড়াও।
বেশ কিছু দোকানের উত্তপম জনপ্রিয় দক্ষিণ ভারতীয় খাবার হিসেবে এখানকার মানুষের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
বিক্রেতারা জানান, ধোসা বানানোর প্রক্রিয়া কিছুটা সময় সাপেক্ষ। এর জন্য আগের দিন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয়। প্রথমে পরিষ্কার জলে কিছু চালকে কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। একই সময় ধরে ভিজিয়ে রাখতে হয় ডাল এবং মেথি বীজও।
তারপর ভেজানো চাল, ডাল এবং মেথি বীজের সঙ্গে নুন মিশিয়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে মেশানোর পর যতক্ষণ না মিশ্রণটি ফেঁপে উঠছে ততক্ষণ ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন মতো জল মিশিয়ে মিশ্রণটিকে মোলায়েম করে তুলতে হবে।
বাজারে অবশ্য আজকাল প্রস্তুত করা মিশ্রণও বিক্রি হয়। এরপর চাটুতে সামান্য তেল দিয়ে খুব পাতলা করে মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে।
এখানে অবশ্য দক্ষতারও প্রয়োজন আছে। এরপর কিছুক্ষণ নিখুঁত হাতে চাটু থেকে ধোসাটিকে তুলে নিতে হবে।
এরইমধ্যে যদি ধোসার মধ্যে আলুর তরকারি, কখনও চিজ, অনেক সময় মাখন মিশানো হয়। ব্যাস, হয়ে গেল ধোসা।
তবে এখানেই শেষ নয়, ধোসার সঙ্গে দেওয়া হয় সম্বর এবং নারকেল আর চাল গুড়ো দিয়ে তৈরি চাটনিও। সম্বরের স্বাদ কিছুটা টক। এতে থাকে কারিপাতা, লাউ, ঢেড়শ ইত্যাদি। চাটনিতে থাকে নারকেল আর চালগুড়োর এক অনবদ্য স্বাদ।
ধোসার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি হলেও কলকাতায় দক্ষিণ ভারতীয় খাবার হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে আছে ইডলি। ইডলি বানাতে একই রকম মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
তারপর ওই মিশ্রণটিকে ইডলি কুকারে একটি তুলিতে সামান্য তেল নিয়ে পাত্রে লাগিয়ে রান্না করে নিলেই হয়। কুকারে রান্না হতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ মিনিট।
ইডলি পরিবেশন করা হয় সম্বর ও চাটনির সঙ্গে। মধ্যাহ্ন ভোজ কিংবা রাতের খাবার হিসেবও জনপ্রিয় ইডলি বা ধোসা। তবে বেশি জনপ্রিয় বিকেলের পথ চলতি মুখরোচক খাবার হিসেবে।
এরপরেই আসে সম্বর বড়া। দক্ষিণ ভারতে খাবারটি মেডু বড়াই নামে পরিচিত। ধোসা বা ইডলির মতোই এখানে মিশ্রণটি বানিয়ে নিতে হয় তারপর অল্প গরম তেলে বড়া ভেজে নিতে হয়।
গরম গরম বড়া চাটনি এবং সম্বরের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। দক্ষিণ ভারতের সমস্ত খাদ্যের সঙ্গেই পরিবেশিত হয় সম্বর ও চাটনি।
সম্বর আসলে এক ধরনের সবজির জল। যা শুধু দক্ষিণ ভারত-ই নয়, শ্রীলঙ্কাতেও বেশ জনপ্রিয়।
জানা যায়, মারাঠাদের রান্না ঘর থেকে ১৭ শতাব্দীতে সম্বর সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। আবার অনেকে বলেন, ১৫৩০ সাল নাগাল তামিলদের খাবারে সম্বরের অস্তিত্ব দেখা যায়।
আলু, ঢেড়শ, টমেটো, ডাটার সঙ্গে কারি পাতা ও মশলা মিশিয়ে সম্বর তৈরি করা হয়। কেউ কেউ এতে নারকেলও দিয়ে থাকেন।
তবে দক্ষিণ ভারতে তৈরি হওয়া সম্বর পূর্ব ভারতের রান্না করা সম্বরের থেকে অনেক বেশি টক। মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ ভারতীয় রান্নায় সম্বর কিন্তু অপরিহার্য অঙ্গ।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
ভিএস/এমএ