ঢাকা: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে রেখেছে সরকার। এই নির্বাচনের পর জট খুলতে পারে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা চুক্তির বিরোধীতা করে আসছেন। তার বিরোধীতার কারণেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দুই দফায় চুক্তির উদ্যোগ নিলেও তা স্বাক্ষর করতে পারেনি। বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।
আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক তিস্তা চুক্তির জন্য একটা ইতিবাচক সাড়া আসবে বলে বাংলাদেশ সরকার মনে করছে। তাই এই নির্বাচনকে সরকার এক ধরণের পর্যবেক্ষণে রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়।
সরকারের এই আশান্বিত হওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, গত বছর ঢাকায় এসে মমতা ব্যানার্জি তিস্তার ব্যাপারে তার উপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিস্তার চুক্তি সম্পাদনে তার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পায়। আবার ক্ষমতার বাইরে থাকা বিধানসভার বিরোধী দল সিপিএম এই চুক্তিতে বাধা দেওয়ায় মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কঠোর সমালোচনা করেছে। এই চুক্তির পক্ষে সিপিএমের প্রকাশ্য অবস্থান রয়েছে।
আবার মনমোহনের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের সময় এই চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাই পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। এই অবস্থায় নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতার পরিবর্তন বা ক্ষমতা অপরিবর্তিত থাকলেও তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে পরিস্থিতি অনুকূলেই থাকবে বলে সরকার মনে করছে।
গত বছরের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় এই চুক্তির ব্যাপারে দ্বিতীয় দফায় উদ্যোগ নেওয়া হলে তখনও মমতা ব্যানার্জির কারণে চুক্তি হয়নি।
এরআগে ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহের সফরের সময় মমতার বাধার কারণে চুক্তি হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা বলে মমতা এর বিরোধীতা করেন।
ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মনমোহন সিং ঢাকায় আসেন। তার সঙ্গে ঢাকায় আসার বিষয়টি নির্ধারিত ছিল মমতার। কিন্তু আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের মূখ্যমন্ত্রীরা এলেও শেষ মুহূর্তে মমতা আর আসেননি। সে সময় মততা ব্যানার্জির ভূমিকা ভারত ও বাংলাদেশে বেশ সমালোচিত হয়। এমনকি খোদ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গণেও এটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের নেতারা এটি নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনাও করেন।
ওই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে ঢাকা সফরের সিদ্ধান্ত নেন মমতা ব্যানার্জি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। সফরকালে মমতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব প্রকাশ করেন ও বিষয়টির জন্য তার উপর আস্থা রাখতে বলেন।
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের ৬ জুন দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এই সফরে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি গুরুত্বে সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু মোদির সফরেও চুক্তির ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জির আপত্তি থাকায় তা আর হয়নি।
ভারত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ইস্যুটিকে কাজে লাগানোর কৌশল হিসেবেই মমতা ব্যানার্জি বার বার তিস্তা চুক্তিতে বাধা দিয়ে এসেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার বার বার চুক্তি করার চেষ্টা করলেও রাজ্যের স্বার্থে তিস্তা চুক্তি করতে দেওয়া হয়নি এটা দেখিয়ে নির্বাচনে বাড়তি সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন মমতা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
এসকে/এসআর