কলকাতা: হাজার কেজি কংক্রিট বুকে নিয়ে শুয়ে আছে এক শিশু। তার রক্তাক্ত হাত টুকু দেখা যাচ্ছে।
সামনে হাওড়া স্টেশন। সম্ভবত সেখান থেকেই ফিরছিল একটি পরিবার। গাড়ির ওপরের ‘ট্রে’তে রাখা বেশ কিছু ব্যাগ এবং জিনিস। ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফেরা হলো না। চালকের অসহায় হাত দুটি বেরিয়ে আছে।
মৃত্যুপুরী বোধহয় একেই বলে। এতো বড় দুর্ঘটনা কখনও দেখেনি কলকাতা। ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ হঠাৎ করেই উড়াল সেতু ভেঙে পড়ে। কলকাতার চিৎপুর এবং গণেশ চন্দ্র অ্যাভিন্যুয়ের সংযোগস্থলে ‘গণেশ টকিজ’র ঠিক সামনে এই সেতু ভাঙে। স্থানীয়দের বক্তব্য বুধবার (৩০ মার্চ) রাতে সেতুর বড় অংশে ঢালাই হয়। সকালে সেই অংশই ভেঙেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সেতু ভাঙার পরেই সাধারণ মানুষ উদ্ধারের কাজে হাত লাগায়। কিন্তু হাজার হাজার টনের ইট-পাথর সরানোর ক্ষমতা সাধারণ মানুষের কোথায়! এলাকা ঢেকে গেছে ধোঁয়ায়। ট্রাম লাইনের তার ছিঁড়ে আগুন লেগেছে গাড়িতে।
ক্রেন এসেছে, এসেছে দমকল, ভোটের নিরাপত্তা কাজে আসা আধা সামরিক বাহিনীর জাওয়ানরাও কাজে তৎপর। কিন্তু সেতুর বিরাট অংশকে সরানোর জন্য এই ব্যবস্থা মোটেই যথেষ্ট নয়। সামনেই বড় বাজার এলাকা, কলকাতার ব্যস্ততম এলাকা। দুর্ঘটনার সময় কত লোক ছিলেন সে নিয়ে নানা তথ্য সামনে আসছে।
এলাকার মানুষদের অনেকেই নিখোঁজ। মোবাইল ফোনে অনেকেই পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছেন এলাকার বাসিন্দারা। বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স এসেছে। কিন্তু বিরাট কংক্রিট সরিয়ে দেহ বের করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সাধারণ মানুষ ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। মাইকে মানুষকে শান্ত থাকতে ঘোষণা করছে পুলিশ। কিন্তু কান্নার রোলে চাপা পড়ে যাচ্ছে সেই মাইকের শব্দ। প্রশ্ন উঠেছে এতো বড় বিপর্যয় মোকাবিলা করার মতো ব্যবস্থা আদৌ কলকাতায় আছে কিনা?
কী কারণে এই সেতু ভেঙে পড়লো সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ২০০৮ সালে এই সেতুর শিলান্যাস হয়। তার পর নানা কারণে সেতু নির্মাণ বন্ধ থাকে এক বছর। ২০১২ সালে সেতু নির্মাণ শেষ করার সময় দিয়ে ছিল সরকার। কিন্তু ২০১৬ সালেও সেই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি।
সামনে এসেছে জমি জটের কারণ, প্রবেশ করেছে রাজনীতি আর অবশেষে এই বিরাট দুর্ঘটনা। প্রশ্ন উঠছে কে দায়ী। এই প্রশ্ন উঠবেও। কিন্তু কতক্ষণে সব মানুষ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এই প্রশ্ন নিয়ে প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলেও সঠিক উত্তর দিতে পারেননি কেউ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
ভিএস/আইএ