ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

দুর্ঘটনার পরও রেডিওতে ভেসেছিল নেতাজীর কণ্ঠ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৬
দুর্ঘটনার পরও রেডিওতে ভেসেছিল নেতাজীর কণ্ঠ

কলকাতা: ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্টের পর কমপক্ষে তিনবার রেডিওতে বক্তব্য দিয়েছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রকাশ্যে আনা ফাইল নম্বর ৮৭০/১১/পি/১৬/৯২-এ এমন তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে।

 

২৯ মার্চ, মঙ্গলবার নেতাজী সংক্রান্ত ৫০ টি ফাইল প্রকাশ করেছে ভারত সরকার। প্রকাশিত ওই ফাইলেই এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

নেতাজীকে নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন অনেকেই মনে করেন, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু হয়নি। বরং তার পরও বেঁচে ছিলেন তিনি!

ভারতের জাতীয় আর্কাইভে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে নেতাজী সংক্রান্ত বেশ কিছু ফাইল। সেই ফাইলগুলোর ৮৭০/১১/পি/১৬/৯২ নম্বরের ৯ নম্বর পাতায় উঠে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এই ফাইলের ৯ পাতায় দেখা যায়, নেতাজীর মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর ২৫-১০-১৯৪৫ তারিখে ইউনাইটেড কিংডম এর প্রধানমন্ত্রী একটি বৈঠক করছেন যার বিষয় ‘বোস’।

শুধু তাই নয়, ওই ফাইলের ৯ পাতার শেষ অংশে দেখা যায়, ওই দিনই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা আলোচনার পর ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড ওয়েভেল-কে চিঠি লিখে  ‘বোস’ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বলেন।

এই দু’টি ঘটনা প্রমাণ করে ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট নেতাজীর মৃত্যুর খবর যে সঠিক নয়, সেটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরাও জানতেন।

ফাইলের পরের পাতায় আছে আরও এক চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। ১৯-০২-১৯৪৬ সালে দিল্লি থেকে ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দা দফতরকে কিছু তথ্য দেয়।

ভারতের তৎকালীন আইবি দফতর সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দাদের জানায়, ‘নেতাজী তার কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে গোপন ডেরায় আত্মগোপন করতে চলেছেন’।

এ তথ্য প্রমাণ করে, নেতাজীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ পেলেও ব্রিটিশ গোয়েন্দারা জানতেন নেতাজী বেঁচে আছেন। সে কারণেই তারা তার গতিবিধির উপর নজর রাখছিলেন।

রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মৃত্যু ঘোষণার পর প্রথম নেতাজীর ভাষণ রেডিওতে প্রচারিত হয়।

ওই ভাষণে নেতাজী জানান, ‘সবচেয়ে  শক্তিশালী ছায়ায় আছি আমি। ভারতের জন্য আমার হৃদয় ব্যথিত। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই আমি ভারতে যাবো। এটা ১০ বছরেও হতে পারে। কিংবা তারও আগে।

এর থেকে বোঝা যায় নেতাজী ১৯৪৫ সালের শেষে দাঁড়িয়ে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা কথা বলেছিলেন। যদিও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়নি। কিন্তু নেতাজীর বেঁচে থাকার প্রমাণ হিসেবে এই তথ্যটিকে জোর দিচ্ছেন গবেষকরা।

এরপর ১৯৪৬ সালের ১ জানুয়ারি ফের নেতাজীর বক্তব্য প্রচারিত হয় রেডিওতে এবং এর কিছুদিন পরই ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেতাজী ফের তার কথা রেড়িওর মাধ্যমে জানান।

গবেষকদের বরাতে জানা যায়, ওই ভাষণ যখন প্রচারিত হয়, ততোদিনে জাপান আত্মসমর্পণ করেছে। ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। নেতাজীর তৃতীয় ভাষণে জাপানের আত্মসমর্পণের কথা ছিল বলেও জানা গেছে।

সর্বশেষ ভারত সরকারের প্রকাশিত ৫০ টি ফাইলে দাবি করা হচ্ছে, ১৯৭২ সালের ৬ মার্চ নেতাজী অন্তর্ধান সংক্রান্ত ফাইল (ফাইল নম্বর- ১২(২২৬)/৫৬) নষ্ট করা হয়। এ ছাড়াও ২৩(১৫৬)/৫১ নম্বর ফাইলের বেশ নথিও নষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে এই ফাইলগুলি যদি সত্যি নষ্ট করা হয়ে থাকে, তবে কেন এই ফাইল গুলিকে নষ্ট করা হোল? কি তথ্য ছিল এই ফাইলে?

নেতাজী বিষয়ে গবেষক অনুজ ধর সম্প্রতি টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘গুমনামি’ বাবার বাক্স থেকে নেতাজীর বাবা- মায়ের ছবি পাওয়া গেছে।

গবেষকরা বলছেন, ‘গুমনামি’ বাবার বাক্সে নেতাজীর অন্তর্ধান নিয়ে গঠিত খোসলা কমিশনের ৪০ পাতার একটি প্রতিবেদনও পাওয়া গেছে। এসব ঘটনা বহুদিনের জল্পনার সত্যতার দিকেই ইঙ্গিত করছে।

‘কিন্তু একটি প্রশ্ন মনে ভাসে, গুমনামি বাবা-ই যদি নেতাজী হন, তাহলে তিনি নিজেই বা চুপচাপ ছিলেন কেন? প্রকাশ্যে এলেন না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। ’

‘এমনকি গুমনামি বাবার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়, তবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,’ বলেন গবেষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৬
ভিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।