কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলায় নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে শুরু হচ্ছে বিধানসভার ভোট। মোট ছয় দফায় এ নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
এরই মধ্যে তিন জেলায় শেষ হয়েছে ভোটের প্রচার। কিন্তু বাকি কেন্দ্রগুলোতে প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে।
বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোকে কোনো ভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নয় রাজনৈতিক দলগুলো। তাই রোববার (০৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই ছোট ছোট দলে বেড়িয়ে পড়েছেন নির্বাচনের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমনটাই দেখা গেলো। কোথাও পায়ে হেঁটে, কোথাও গাড়িতে চড়ে আবার কোথাও সাইকেলে করে প্রচারে নেমেছেন তারা।
কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র কসবা বিধানসভা কেন্দ্র। সেখানে তৃনমূল কংগ্রেস নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের দমকল মন্ত্রী জাভেদ খান লড়ছেন।
এ কেন্দ্র থেকে সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে তরুণ ছাত্র নেতা শতরূপ ঘোষকে।
প্রচারে বেড়িয়ে বাংলানিউজকে শতরূপ জানালেন, একদিকে শেষ পাঁচ বছরে শাসক দলের দুর্নীতি বন্ধ করা অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা তার মূল ইস্যু।
কিন্তু শাসক দলের হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা কতটা? এর আগের নির্বাচনে এই কেন্দ্রেই পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
এই প্রশ্নের উত্তরে শতরূপ জানান, তিনি প্রচারে ভালো সাড়া পাচ্ছেন। নির্বাচনে জয় নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী তিনি।
অন্যদিকে আরেক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র। এখানে শাসক দলের প্রথম সারির নেতা তথা যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন তরুণ সি পি এম নেত্রী মধুজা সেন রায়।
নির্বাচনী ক্ষেত্রে ঘুরতে ঘুরতে দুই প্রার্থীর সঙ্গেই দেখা হয়ে গেলো। স্টুডিও পাড়ায় যথেষ্ট পরিচিত মানুষ অরূপ বিশ্বাস।
এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়নের কাজ করেছেন। জেতার ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী তিনি। প্রচারে সামনে রাখছেন বিগত সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের পরিসংখ্যান।
অন্যদিকে তার বিরুদ্ধে সি পি এম প্রার্থী মধুজা সেন রায় নির্বচনের ময়দানে নবীন। তবে বাম ছত্র সংগঠনের লড়াকু নেত্রী বলে মধুজাকে চেনে কলকাতার মানুষ।
সুবক্তা মধুজার বাড়তি সুবিধা তার ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’ ইমেজ। এই কথা জানালেন টালিগঞ্জ বিধান সভা এলাকার ভোটার অশোক দাস।
জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মধুজাও। তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে নারীদের ওপর বাড়তে থাকা অত্যাচার, একের পর এক নারী নির্যাতন এবং শাসক দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই তার প্রধান ইস্যু।
বেহালা–পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক দলের প্রার্থী শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ভোটের প্রচারের মিছিল এবং পথ পরিক্রমা করছেন পার্থ বাবু।
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো প্রচারের ধারেভারে অনেকটাই এগিয়ে আছেন বিরোধী সি পি এম প্রার্থীর থেকে।
যদিও কথাটা মানতে চাইলেন না বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী কৌস্তুভ চ্যাটার্জি।
সিপিএম –এর তরুণ ব্রিগেডের পরিচিত মুখ কৌস্তুভ চ্যাটার্জি। ছাত্র নেতা হিসেবে দীর্ঘ দিন রাজনীতি করেছেন। বর্তমানে ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
প্রায় হাতের তালুর মোট চেনেন তার নির্বাচনী ক্ষেত্রটিকে। তরুণ হলেও নির্বচনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা তার নতুন নয়।
এর আগে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেছেন। তাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত বকসির মতো নেতাদের বিপক্ষে। তবে পরাজিত হয়েছেন দু’ক্ষেত্রেই।
তবে এবার আশা করছেন জেতার। তার মূল ইস্যুর মধ্যে আছে এলাকার উন্নতি না হওয়া, শাসক দলের দুর্নীতি এবং পশ্চিমবঙ্গে শিল্প গড়ে না ওঠা।
কলকাতার অপর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
তবে ২০১৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে নেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০১১ সালে তিনি পরাজিত হন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনিষ গুপ্তের কাছে।
এই নির্বাচনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জায়গায় লড়াই করছেন সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী।
এলাকায় কখন সাইকেল চড়ে কখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছেন সুজন চক্রবর্তী। শাসক দলের দুর্নীতি, সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নেতা মন্ত্রীদের জড়িয়ে পড়া, নারদ স্ট্রিং কাণ্ড, শিল্পের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রশাসনের বিভিন্ন কাজ কর্ম প্রভৃতি বিষয়ে কথা বলছেন তিনি।
অন্যদিকে বাড়ি বাড়ি প্রচার করছেন মনীষ গুপ্ত। সহজেই জয়লাভ করবেন বলে আশা করছেন তিনি। তার প্রচারের লক্ষ্য বিগত বছরের উন্নয়ন।
তিনি জোর দিচ্ছেন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বা লোডশেডিং –এর সমস্যা সমাধের বিষয়টি।
প্রচারের লড়াইতে জমে উঠে প্রাক ভোটের তিলোত্তমা। গরমের সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ বাড়ছে প্রচারেও। আর সেই উত্তাপেই সরগরম কলকাতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৬
ভিএস/এমএ