আগরতলা: কচ্ছপদের মধ্যে একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বোস্তামী কচ্ছপ। এ প্রজাতির কচ্ছপ ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের বিশেষ বিশেষ কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়।
ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র গোমতী জেলার উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের কল্যাণ সাগর দিঘীতে বোস্তামী কচ্ছপ দেখতে পাওয়া যায়।
ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য গত কয়েক বছর আগে কল্যাণ সাগর দিঘীর পাড় পাকা করে বাঁধানো হয়। যাতে পাড়ে বসে ও হেঁটে দিঘীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে দর্শনার্থীরা।
কিন্তু পাড় বাঁধানোর কয়েক বছরের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় দিঘীর কচ্ছপসহ মাছের অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু বেড়ে গেছে এবং কচ্ছপের প্রজননও ব্যাপকহারে কমেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বোস্তামী কচ্ছপের উপর। এরা পাড় বাঁধানোর পর ডিম পাড়েনি বললেই চলে।
একদিকে কচ্ছপের অস্বাভাবিক মড়ক ও নতুন বাচ্চা জন্ম না নেওয়ার ফলে ত্রিপুরা একমাত্র আশ্রয়স্থল থেকেও বোস্তামী কচ্ছপ হারিয়ে যেতে বসেছিলো।
এ বিষয়টি নজরে আসার পর ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির কর্তৃপক্ষ তড়ি-ঘড়ি খবর দেন রাজ্যের বন দফতরকে। বন দফতর রাজ্যের সিপাহীজলা ওয়াইল্ড লাইফ সেঞ্চুরির প্রাণী চিকিৎসক ও জীব বিজ্ঞানিদের একটি টিমকে কল্যাণ সাগর দিঘীর কচ্ছপ এবং সমস্যা পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হয়।
এ দলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানায়, দিঘীর পানিতে অস্বাভাবিক মাত্রায় অক্সিজেন কমে যাওয়ায় কচ্ছপসহ মাছের মৃত্যু হচ্ছে এবং কচ্ছপের ডিম না পাড়ার কারণ হিসেবে দিঘীর চারিদিক পাকা করে বাঁধানোকে দায়ী বলে চিহ্নিত করেন বিশেষজ্ঞরা।
পানির অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞানীরা দিঘীতে এরিয়েটর যন্ত্র স্থাপন ও কচ্ছপের প্রজননের স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য পাড়ের একটা অংশ ভেঙ্গে ফেলার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুসারে দিঘীতে গত প্রজনন মৌসুমের আগে এরিয়েটর যন্ত্র স্থাপন করা হয় ও পাড়ের ছোট একটা অংশের পাকা ওয়াল ভেঙ্গে বালি ফেলে কচ্ছপের ডিম পাড়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়।
পাশাপাশি কচ্ছপদের দেখাশুনার জন্য জীবন কৃষ্ণ দেব নাথ নামে একজন বন কর্মী নিয়োগ করা হয়।
জীবন কৃষ্ণ দেব নাথ বাংলানিউজকে জানান, এ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গত বছর কচ্ছপের প্রজননে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। বোস্তামীসহ অন্যান্য কচ্ছপ প্রায় ৫শ’ ডিম পেড়েছে। যার অধিকাংশ থেকে বাচ্চা ফুটে বেরিয়ে দিঘীর জলে রয়েছে।
এ সাফল্যে উৎসাহিত মন্দির কমিটি, তাই এবার দিঘীর আরও ১১০ মিটার পাকা ওয়াল ভেঙ্গে কচ্ছপের ডিম পাড়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
কৃষ্ণ দেব নাথের আশা এ বছর প্রজনন মৌসুমে কচ্ছপ আরও বেশি ডিম পাড়বে। তাই একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এ ধরনের উদ্যেগ বোস্তামী কচ্ছপকে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি থেকে বের হয়ে আসতে একটি বড় ভূমিকা নেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
আরবি/এসএইচ