কলকাতা: রমজান মাসে রোজাদারেরা ইফতারিতে যে ফলটি সবচে বেশি ব্যবহার করেন সেটি খেজুর বা খোরমা। খেজুর শুধু পছন্দের ফল হিসেবে নয়, বহুকাল আগে থেকে বিভিন্ন শুভ কাজেও এর ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
একদিকে যেমন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ইফতারিতে প্রথম খেজুর খেয়ে থাকেন, ঠিক তেমনি গ্রিসের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় সেদেশে খেজুরকে ‘ঈশ্বরের ফল’ বলে চিহ্নিত করা হতো।
শুধু তাই নয় ফিনিক্স দাক্তিলিফেরা (Phoenix dactylifera) –এই বৈজ্ঞানিক নামের এ ফলটিকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে থেকে সুমিষ্ট ফল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভিটামিন ‘এ’ ‘সি’ এবং ম্যাঙ্গানিজে পরিপূর্ণ খেজুরে কোনো কোলেস্টোরেল নেই বললেই চলে। এছাড়া আছে ভিটামিন ‘বি’, কার্বোহাইড্রেট, যা আমদের এনার্জি দেয়, ভিটামিন ‘ই’ যা ত্বকের জন্য উপকারি, ভিটামিন ‘কে’ এবং কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট এবং পটাসিয়াম। ফলে এটি যেমন চোখ, ত্বক, চুল এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক তেমনি হৃদযন্ত্রের জন্যও ভাল।
এই এক বীজের ফলের মূলত তিনটি ধরন রয়েছে, যেগুলি চাষ করা হয়। প্রথমটি নরম খেজুর যেটিকে বর্হি, হলয়ি, খাদরয়ি, মেদজুল ইত্যাদি বিভিন্ন নামে নামকরণ করে হয়েছে। দ্বিতীয়টি অর্ধ-শুষ্ক খেজুর যাকে দেরি, দেগলেত নূর, জাহদি নামে বলা হয়ে থাকে, আর তৃতীয়টি শুষ্ক খেজুর।
স্বাদ অনুযায়ী খেজুরকে আরও কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। ‘আমবারা’, এটি মদিনার বিখ্যাত খেজুর। আকারে একেকটি দেড় ইঞ্চি লম্বা, রঙ গাঢ় বেগুনি, স্বাদে একটু কম মিষ্টি। নরম, একটু বেশি লম্বা বাদামি এবং মাঝারি মিষ্টি খেজুরটিকে বলা হয় সাফাওয়ায়ি। ‘মরিয়াম’ বলা হয় এক ধরনের লালাচে বাদামি খেজুরকে আর আকারে কিছুটা ছোট এবং অন্যান্য জাতের খেজুরের থেকে বেশ কিছুটা কম মিষ্টি খেজুরকে বলা হয় ‘সুগায়ী’। এই খেজুরের বাইরের দিকটি বেশ নরম হয়। মিষ্টি কম পছন্দ এবং নরম খেজুর পছন্দ করেন, তারা এ খেজুরটি খেতে পারেন। বাজারে আরও একধরনের খেজুর পাওয়া যায় জেটিকে ‘আজওয়া’ বলা হয়। এগুলির রঙ গাঢ় বেগুনি বা কালচে ধরনের।
খেজুরের এ রকম ফের বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় গ্লুকোজ, ফ্রুটকোজ এবং সুক্রোজ। এই রাসায়নিক পদার্থগুলির তারতম্যের ফলে নরম, অর্ধ-শুষ্ক এবং শুষ্ক খেজুর তৈরি হয়।
খেজুরকে পাকানোর আবার বেশ কয়েকটি পর্যায় আছে। যখন খেজুর কাঁচা থাকে তখন আরবি ভাষায় একে বলা হয় ‘কিমরি’। এই সময় খেজুরের রঙ থাকে সবুজ। ‘খলাল’ শব্দের অর্থ পুষ্ট খেজুর। খেজুর পাকলে তাকে বলা হয় ‘রুতাব’। এটাই নরম খেজুর। পাকা এবং শুকনো খেজুরকে বলাহয় ‘তমর’।
ইতিহাস ঘাঁটলে খেজুর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য সামনে আসে। যদিও খেজরের চাষ কবে শুরু হয়েছিল বা ঠিক কোনো জায়গায় এর প্রথম চাষ হয়, সেই বিষয় নিয়ে নানা পণ্ডিতের নানা মত রয়েছে। তবে, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ বছরের আগে আরবে এ চাষের প্রমাণ ঐতিহাসিকরা সংগ্রহ করেছেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছরে মেসোপটেমিয়ার মানুষরা খেজুর খেতেন, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতাতেও খেজুরের ব্যবহারের কথা জানা যায়। সময়কাল মোটামুটি ভাবে খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ সাল।
শুধু খেজুর গাছের ফলই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রান্নায় খেজুর পাতা ব্যবহার করা হয়। অনেক দেশেই খেজুর ফুলকে রান্নার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর খেজুর রস গোটা এশিয়ায় যথেষ্ট জনপ্রিয় সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যেসব কারণে ইফতারির পর খেজুর একান্তভাবেই খাওয়া উচিৎ সেসবের মধ্যে প্রধানতম হল খেজুর গ্লুকোজের ঘাটতি মেটায়। শুধু তাই নয়, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে ভরপুর থাকায় এই ফলটি শরীরকে খুব তাড়াতাড়ি তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। শুধু পবিত্র রমজান মাসে রোজাপালনের সময়ই নয়, সারাবছর খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখলে বিভিন্ন শারীরিক উপকার হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৬ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৬
ভিএস/এসএইচ/জেএম