কলকাতা: কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, মারকুইস স্ট্রিট এলাকায় সেহেরির সময় খাবার দোকান খোলা পাচ্ছেন না বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করা অতিথিরা। বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষদেরও সেহেরির সময় সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।
শুধু বাংলাদেশের নাগরিকরাই নয় অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানুষরাও এসব হোটেলে অবস্থান করেন। তারা সবাই একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ইফতারির সময়ও খাবার দোকান ও রেস্তরাঁয় নেই কোনো ব্যবস্থা।
ফলে অনেক সময়ই রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা হোটেল অথবা গেস্ট হাউজ থেকে খাবার কিনে ইফতার সারছেন অতিথিরা। সেহেরির সময় দোকান খোলা না থাকা ও দোকানগুলিতে ইফতারের ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকেই পড়েছেন বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষরা।
এসব এলাকার খাবার দোকানের সারা বছরের ব্যবসা বিদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষত বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষরাই তাদের প্রধান ভরসা। কিন্তু রমজান মাসে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ দোকানের মালিকই রাতে সেহেরির সময় দোকান বন্ধ রাখেন। এ বিষয়ে দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রধানত দুটি কারণ।
প্রথমত তারা জানান, রমজানের সময় এ অঞ্চলে রাতে দোকান খোলা রাখার রেওয়াজ কোনো দিনই ছিল না। তাই বর্তমানেও রাতে সেহেরির সময় দোকান খোলা রাখা হয় না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর দোকান বন্ধ করে দেন তারা।
দ্বিতীয় সমস্যাটি কর্মচারীর; দোকানের সীমিত সংখ্যক কর্মচারীর পক্ষে সারাদিন কাজ করে আবার রাতে রমজানে মাসে দোকান খুলে রাখা প্রায় অসম্ভব। এ কারণে রাতে দোকান বন্ধ রাখেন তারা।
এসব এলাকার প্রিন্স, কস্তুরী, রাঁধুনি, ধানসিঁড়ি, খালেক প্রভৃতি বিখ্যাত দোকানগুলির কোনটিই সেহেরির সময় খোলা থাকে না। গোটা এলাকায় শুধু দাওয়াত এবং সনম নামের দু’টি দোকান নিয়মিতভাবে সেহেরির সময় খোলা থাকে। যদিও কলকাতার ভিন্ন প্রান্তে পার্ক সার্কাস, ক্ষিদিরপুর অঞ্চলে রমজান মাসেও দোকান খুলে রাখা হয়।
এছাড়া মারকুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট এলাকা থেকে কিছুটা দূরে ফি আহমেদ কিদওয়াই রোড এবং নিউ মার্কেটের সামনে কয়েকটি দোকান খোলা থাকে।
রোগী ও তাদের স্বজন যারা কলকাতায় নতুন এসেছেন তাদের জন্য হোটেল থেকে বেড়িয়ে বেশকিছুটা দূরে গিয়ে খাবার খাওয়া সমস্যাজনক। অন্যদিকে থাকার হোটেল ও গেস্ট হাউজেও সেহেরির কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বেশ বিপাকেই পড়ছেন তারা।
স্বল্প কর্মচারী এবং নেহাত আগেও খোলা রাখা হতো না বলে এখনও খোলা রাখা হয় না- দোকান মালিক ও কর্মচারীদের এই যুক্তি আদতে ঠুনকো যুক্তি। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টার সুরাহা করা সারা বছর ধরে পর্যটকদের ওপর নির্ভর করা ব্যবসায়ীদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
যেখানে ভারত সরকার ঈদ উপলক্ষে ভারতে আসার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রায় ৫৬ হাজাররের বেশি মাল্টিপিল ভিসা প্রদান করেছে সেখানে যে সমস্ত ব্যবসায়ীরা সারা বছর ধরে বাংলাদেশের পর্যটকদের ওপর নির্ভর করে ব্যবসা করেন তাদের সেহেরির সময় দোকান খোলার রাখার বিষয়ে গা-ছাড়া ভাব যথেষ্ট অবাক করার মতো বিষয়।
শপিং মল ও রেস্তরাঁ রাতে খোলা রাখতে বুধবার (২৮ জুন) অনুমতি দেবার প্রস্তাব এনেছে ভারত সরকার। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে আগামী দিনে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। স্থানীয় প্রশাসন এ দিকে নজর দিলেও সমস্যা অনেকটা মিটতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে কলকাতায় সেহেরির সময় খাবার দোকান খুলে রাখার বিষয়টির সমাধান হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা,৩০ জুন , ২০১৬
ভিএস/এমজেএফ