কলকাতা: ১৯৪৫ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়ে আরও একটি পর্দা উন্মোচিত হলো। বৃহস্পতিবার (০৭ জুলাই) ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে প্রকাশিত কিছু ফাইলের মধ্যে একটিতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৬৮ সালে নেতাজী রাশিয়াতে অবস্থান করছেন।
এই ফাইলে বলা হচ্ছে, রাশিয়ান শহর ওমসকে ১৯৬৮ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস বিপ্লবী বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে নিখিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এই ঘটনা ১৯৪৫ সালের নেতাজীর কথিত বিমান দুর্ঘটনার ২৩ বছর পর।
সাংবাদিক নরেন্দ্রনাথ সিন্দেকরের দাখিল করা হলফনামায় দাবি করা হয়েছে, ১৯৪৫ সালে বিমান বিস্ফোরণে নেতাজির মৃত্যু হওয়ার কথা ছড়িয়েছিলো। কিন্তু, তার ২৩ বছর পরে নিখিল চট্টোপাধ্যায় ও তার স্ত্রীর সঙ্গে ১৯৬৮ সালে রাশিয়ার ওমস শহরে নেতাজি দেখা হয়েছিলো।
মনে করা হচ্ছে, ভারতে গেলে তাকে যুদ্ধ অপরাধী হিসেবে আটক করা হতে পারে। সম্ভবত এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই রাশিয়াতে আত্মগোপন করে ছিলেন নেতাজী। নরেন্দ্রনাথ সিন্দেকরের দাখিল করা হলফনামায় আরও জানা যাচ্ছে, রাশিয়াতে নেতাজীর আত্মগোপনের বিষয়টি জানতেন স্তালিন।
স্তালিনকে কৃষ্ণ মেনন অনুরোধ করেন এই বিষয়টি গোপন রাখতে। কৃষ্ণ মেনন ছিলেন জহরলাল নেহেরুর খুবই কাছের মানুষ। তিনি নেহেরুর দূত হিসেবে স্তালিনের সঙ্গে কথা বলেন।
এই তথ্য প্রকাশের পর অনেকগুলো প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রথমত, এই তথ্য যদি সঠিক হয় তবে ১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনার যে তত্ত্ব ছড়ালো হয়েছিলো সেটি কার পরিকল্পনা ছিলো।
দ্বিতীয়ত, জাপানে যেটি নেতাজীর চিতাভষ্ম বলে দাবি করা হচ্ছে সেটির আদৌ সত্যতা আছে কি?
ভারতের স্বাধীনতার (১৫ আগস্ট, ১৯৪৭) ২১ বছর পরেও নেতাজী দেশে ফিরলেন না কেন? শুধুমাত্র এই ভয়ে যে তাকে যুদ্ধ অপরাধী বলে গ্রেফতার করা হতে পারে। কিন্তু সেই সময়ে নেতাজীর প্রতি ভারতের সাধারণ মানুষের যে আবেগ ছিলো, সেই বিষয়টির কথা মাথায় রাখলে ভারত সরকারের তার পাশে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকতো কি? নাকি ছদ্মবেশে ভারতে ফিরেছিলেন নেতাজী!
রাশিয়াই বা কেন সেই সময় নেতাজীর মতো ব্যক্তির বেঁচে থাকার বিষয়টি গোপন করতে রাজি হয়েছিলো। শুধু ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঠিক রাখতে! তবে কি রাশিয়া মনে করেছিলো, ভারতে সেই সময়ের সরকারের বিরুদ্ধে অস্থিরতা তৈরি হলে অসুবিধা হবে রাশিয়ার? এই ফাইল প্রকাশের পর এ ধরনের অনেক প্রশ্নই সামনে উঠে আসছে।
আগামীতে আরও কিছু ফাইল প্রকাশ করা হবে বলে ভারত সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। আশা করা যায়, সেই ফাইলগুলোতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৬
ভিএস/এসএনএস