কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গ মন্ত্রীসভা রাজ্যের নাম বদলে ‘বঙ্গ’ বা ‘বাঙলা’ করার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়াও রাজ্যের নাম পরিবর্তন করলে প্রশাসনিক সমস্ত জায়গায় এই নাম পরিবর্তন করতে হবে। এটা একদিকে যেমন সময় এবং পরিশ্রমসাধ্য অন্য দিকে এর জন্য খরচও অনেক।
এই বিতর্ক যে শুরু হবে সে কথা নাম পরিবর্তনের ঘোষণার সাথে সাথেই আঁচ করা গিয়েছিল। প্রাথমিক মতামত জানানোর সময়ই বিভিন্ন পেশা এবং ক্ষেত্রের জনগণ নানা রকম প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন।
ইতিহাসের প্রসঙ্গ তুলে অনেকেই বলছেন ‘বঙ্গ’ বলতে মূলত পদ্মার তীরবর্তী অংশকে বোঝায় । অভিধান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন অভিধানে ‘বঙ্গ’ শব্দটিকে “পূর্ববঙ্গের প্রাচীন নাম” বলে দেখান হয়েছে । তাদের দাবি, তার মানে ভৌগলিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বঙ্গ’ দেওয়া সঠিক হবে না।
ইতিহাস ঘেঁটে যতদূর জানা যাচ্ছে চতুর্দশ শতাব্দীর ইলিয়াস শাহী রাজবংশের আমল থেকে ‘বাংলা’ বা ‘বাঙলা’ নামের প্রচলন হয়েছে । সেখানে ‘বাংলা’ বা ‘বাঙলা’ বলতে বর্তমান বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশের ভূখণ্ডকে বোঝান হয়েছে। সেই দিক থেকে দেখলে বাংলাদেশ কথিত ‘বাঙলা’ ভূখণ্ডে একটি স্বাধীন দেশ। সেই যুক্তিতে ইলিয়াস শাহী আমলে কথিত পশ্চিমবঙ্গের অংশ হতে হবে ‘বাংলা’ বা ‘বাঙলা’ ভূখণ্ডে অবস্থিত একটি ভারত শাসিত প্রদেশ। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের নতুন নাম যদি ‘বাঙলা’ করা হয় সেটিও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকছে না। অনেকেই বলছেন ‘বঙ্গ’ বলতে ঐতিহাসিক ভাবে পদ্মা তীরের সুজলা সুফলা অংশকে বলা হয়েছে। তবে কেন গৌর বঙ্গ এবং রাঢ় বঙ্গকে ‘ বঙ্গ’ বলা হবে।
তর্ক বেঁধেছে মানুষের মতামত নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে। অনেকেই ‘বাঙলা’ বা ‘ বঙ্গ’ যে কোন একটিকে মেনে নিতে চান। তাদের কাছে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আগে বলার সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
কিন্তু যারা শুধুমাত্র আগে বলার সুযোগ পাওয়া বা ইংরেজি বর্ণমালা দিয়ে সূচী তৈরি হওয়ার বিষয়টিকে নাম পরিবর্তনের কারণ হিসেবে মানতে চাইছেন না। তার বলছেন পরবর্তী সময়ে যদি ‘হিন্দি’ বর্ণমালায় সূচী তৈরি শুরু হয় তখন কি আগে সুযোগ পাওয়ার জন্য আবার নাম পরিবর্তন করা হবে? সেক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইয়েমেন-এর শেষে বলার প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন তুলেছেন এই অজুহাতে ইয়েমেন যদি তার নাম বদলে ফেলে সেটা কি আদৌ তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতির পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে!
অনেকের মতে পরিবর্তনের ইস্যু নিয়ে গণভোট করা হলে সাধারণ মানুষ ইতিহাস, ভৌগলিক অবস্থানের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র আগে বলতে পাওয়ার সুযোগের কথা ভেবে ভোট দিতে পারেন।
সেক্ষেত্রে যদি নাম পরিবর্তনের পক্ষে ভোট পড়বে তবে সেই ভোটের ফলাফলে নাম পরিবর্তন করা হলে আদৌ পশ্চিমবঙ্গের এবং এই ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ইতিহাসের সঙ্গে সুবিচার করা হবে না, বলে এই মতামতের পক্ষের মানুষরা মনে করছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন , শুধুমাত্র আগে বলতে পারলেই রাজ্যের উন্নয়ন হবে এটা কি মেনে নেওয়া যায়? নাকি বক্তাদের বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা এই ক্ষেত্রে একমাত্র বিবেচ্য।
রাজ্যের নাম পরিবর্তনের ইস্যুতে সরাসরি দুইভাগ বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনের ইস্যুতে প্রাথমিক মন্তব্যে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছিলেন নতুন নাম ‘বাঙলা’ হলে ভালোই হয়। কিন্তু রাজ্যের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগের প্রতিবাদে ১৬ অগাস্ট ‘পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও দিবস’ পালন করবে বিজেপি।
বিজেপি-এর প্রদেশ সহ-সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তৃণমূল সরকার দেশভাগের যন্ত্রণা, বাঙালির ইতিহাস এসব ভুলিয়ে দিতে চাইছে।
নাম পরিবর্তনের ইস্যুতে যেটা ক্রমশ সামনে আসছে সেটি হোল রাজ্যের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সমস্ত দিকে বুঝে নিয়ে চাইছে জনগণ। বিশেষ করে রাজ্যের ইতিহাস সচেতন মানুষ। শুধুমাত্র ইংরেজি বর্ণমালায় তৈরি সূচিতে আগে বলার সুযোগ পাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময় ০৭৪৫ ঘণ্টা, ০৫ আগস্ট, ২০১৬
ভিএস/এমএমকে