কলকাতার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। এই নগরের মানুষকে দু'দন্ডের প্রশান্তি থেকে শুরু করে মৃত মানুষের শেষ কৃত্যের অংশ হিসেবে অস্থিটুকুও গঙ্গায় ভাসান শহরবাসী।
দুপুরের কড়া রোদে কর্মব্যস্ত মানুষ ক্লান্তি জুড়াতে ছায়া খোঁজেন গঙ্গার তীরে। নিম্নবিত্ত মানুষরা আসেন স্নান সেরে নিতে। পশ্চিম হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে বারবার এই নদী তার দিক আর রূপের পরিবর্তন করেছে। ভারতবর্ষে নিজেকে এক পবিত্র দেবী হিসেবে গড়ে নিয়েছে। বয়ে চলেছে মর্ত্য থেকে স্বর্গ পর্যন্ত।
কলকাতায় গঙ্গার নদীর ওপর দিয়ে গিয়েছে হাওড়া ব্রিজ। যার একপাড়ে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন। সারাদিনই ভক্ত আর দর্শনার্থীদের আনাগোনা হয় গঙ্গাকে কেন্দ্র করে।
দুই তীরে রয়েছে মন্দির। স্থায়ী ও অস্থায়ী। এখানে হয় পুঁজো অর্চনা। ধর্মীয় রীতি ছাড়াও কেউবা গঙ্গার ধারে মনের আশা পূরণের জন্য মিনতি করেন, কেউবা গঙ্গার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পুঁজো দেন। পুঁজো শেষে হিন্দু ধর্মীয় মানুষ ফুল ভাসান নদীতে। মেলে আত্মিক শান্তি।
কোটি মানুষের ব্যবহারে পৃথিবীর অন্যতম দূষিত নদী হয়ে উঠেছে গঙ্গা। তবে এও সত্যি এখানেই শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। তাইতো শুধুই শান্তির বাতাস পেতে আসেন অনেকে। যাই হোক কলকাতায় একটু খোলা বাতাস দেয় গঙ্গাই।
সন্ধ্যা নামলেই গঙ্গার ধারে মানুষের ভিড় বাড়ে। গঙ্গার হাওয়ায় সারা দিনের ধকল মিলিয়ে যায়, দেয় শান্তি ও পবিত্রতার পরশ।
বিজয় বোস কর্মসূত্রে সারাদিন থাকেন যতীন দাস পার্ক এলাকায়। কাজ শেষে প্রায় দিনই বাড়ি ফেরার পথে গঙ্গার তীরে কাটান কিছুটা সময়। বলেন, গঙ্গার বাতাসে আলাদা একটা প্রশান্তি আছে। আমাদের কাছে এর সম্মান আলাদা। এখানে আসলে মানুষের মনে শান্তি মেলে।
অন্যদিকে হাওড়ার ব্রিজের বাতির আলো গঙ্গার জলে যেন খেলা করে তৈরি করে এক মোহনীয় রূপ। গঙ্গার সেই বিচিত্র সৌন্দর্য দেখতে কলকাতায় আসা পর্যটকরাও সময় কাটান তীরে।
গঙ্গার তীরে আসা মানুষদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে খুচরা নানা পন্যের বিক্রির পসরা। ছোলা, ঝাল মুড়ি, রুটি, এগ রোল বিক্রি হচ্ছে বেশ। কেউবা আবার বিক্রি করছেন ব্যাগ। রয়েছে ফুলের পসরাও।
কথিত আছে পৃথিবীর এই একমাত্র নদী যার মধ্যে জৈব বর্জ্য পদার্থকে ভেঙে নিজেকে শুদ্ধ রাখার ক্ষমতা আছে।
বিজ্ঞানীদের মতে এটি এক প্রকারের অনুজীবের জন্য হয় যা একমাত্র গঙ্গাতেই পাওয়া যায়। এই অনুজীব জৈব বর্জ্যের বিশ্লেষণ ঘটিয়ে নদীতে অক্সিজেনের পরিমান বৃদ্ধি ঘটায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
ইউএম/এমএন