তেমনি ঐতিহ্য ধরে রাখতে কলকাতা নগরীর সড়ক পথে এখনও দেখা মেলে হাতে টানা রিকশার। উনিশ শতকে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে কলকাতা সিটিতে যাত্রা শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী এ বাহনের।
কালের পরিক্রমায় প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কলকাতায় যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে বৈল্পবিক পরিবর্তন। প্যাডেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা, মেট্রোরেল, পাতাল রেল, স্কুটার ও উবার সেবার ভিড়ে শোভা বর্ধন ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে এখনও টিকে আছে পুরনো এ বাহন।
বংশের ধারা ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হাতে টানা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এক শ্রেণীর মানুষ। কলকাতা নগরের পার্ক স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ হাতে টানা রিকশার চালক বয়সে প্রবীণ। যুবক চালকদের এ পেশায় তেমন একটা দেখা গেলো না।
নিউমার্কেটের সামনে সারি-সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে হাতে টানা রিকশা। ধূতি কাচিয়ে হাতের ঘণ্টিতে টুং-টাং আওয়াজ তুলে যাত্রীদের লক্ষ্য করে হাঁক-ডাক করতে দেখা যায়। ঘণ্টি হাতে যাত্রীর আশায় বসে আছেন ষাটর্ধ্বো গুপ্ত দাশ।
তিনি বলেন, ‘কলকাতা শহরের শোভা হাতে টানা রিকশা। এটা কোনোদিনও উঠে যাবে না। বাপ চালিয়েছে আমিও চালাই। বয়স হলে কী হবে, এখনও মাইলের পর মাইল যেতে পারি গো। ’
ট্যাক্সিতে করে কলেজ স্ট্রিটে যাওয়ার পথে কথা হয় ট্যাক্সি ড্রাইভার পান্নু সিংয়ের সঙ্গে। তিনি জানালেন, যত পুরোনো হোক, অাধুনিক দিন আসুক, কলকাতা শহর থেকে হাতে টানা রিকশা, ট্রাম ও ট্যাক্সি এই তিন বাহন কখনও উঠে যাবে না। শোভা বর্ধনের জন্য হলেও এসব বাহন টিকে থাকবে। এগুলো হচ্ছে নগরীর প্রাণ।
কলকাতা শহরে বিভিন্ন সড়কের মোড়, গলিতে মাথায় হাত দিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখা গেলো কয়েকজন হাতে টানা রিকশা চালককে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাপটে কদর কম হাতে টানা রিকশার।
পয়ত্রিশ বছর ধরে কলকাতা হাতে টানা রিকশা চালান হরিসাধন দাশ। এ পেশায় বর্তমান করুণ দশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যুবকরা কেউ আর এ পেশায় আসে না। আমাদের যাদের করে খাওয়ার মতো কাজ নেই, তারাই এখন রিকশাটি ধরে আছি। কলকাতার নিউমার্কেট ছাড়া অন্য জায়গা যাত্রী একবারে কম। ’
** হাওড়া ব্রিজে কর্মচঞ্চল প্রাণের মেলা!
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
এমসি/টিআই