ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বিজেপিকে রুখতে পশ্চিমবঙ্গে এক হতে পারে তৃণমুল-বামদল!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৫ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৭
বিজেপিকে রুখতে পশ্চিমবঙ্গে এক হতে পারে তৃণমুল-বামদল!

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বলিষ্ঠ বাম নেতা তথা সাবেক মন্ত্রী গৌতম দেব এর বক্তব্যের সূত্র ধরে এক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। যদিও এই মুহূর্তে খুবই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে আভাসটি। তবে এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

জল্পনার মূল দুই পক্ষ সিপিএম বা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সরকারিভাবে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে লোকসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে নির্বাচনগুলো সংগঠিত হয়েছে, সেসব নির্বাচনে বিজেপি দ্বিতীয় দল হিসেব উঠে আসছে।


 
এই সূত্র ধরেই বলা যায়, নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে সিপিএম-এর। রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় থাকলেও সিপিএম নেতারা সুযোগ পেলেই তীব্র আক্রমণ শোনাতে কসুর করেন না তৃণমূল নেত্রীকে।
 
সেক্ষেত্রে  বলিষ্ঠ বাম নেতা তথা সাবেক মন্ত্রী গৌতম দেব বিজেপি-কে রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরার কথা বললেও আদৌ সেটা সম্ভব কিনা এটাই  প্রশ্ন। এর যথেষ্ট কারণও আছে। বলিষ্ঠ বাম নেতা তথা সাবেক মন্ত্রী গৌতম দেব যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহায্য নেওয়ায়র কথা বলছেন, তখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সিপিএম-এর সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তৃণমূল কংগ্রেসকে দুষছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি-এর উত্থানের জন্য।
 
সীতারাম ইয়েচুরির সুরে কথা বলেছেন সিপিএম-এর অন্য নেতারাও। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও বাম নেতার এই প্রস্তাব খুব একটা আমল না দেওয়া হলেও সরাসরি বাতিল করে দেওয়া হয়নি।
 
এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব ও পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, চির প্রতিদ্বন্দ্বী বামদল জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ তে  জোট করেছিলো। তখন বিজেপি-র মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করার বদলে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পরক্ষভাবে একের পর এক মামলা করে লাগাতার বিরোধিতা করছে সিপিএম। তাহলে তাদের সঙ্গে কি জোট হতে পারে?
 
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অংশ সিপিএম নেতাকে সমর্থন জানিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, সিপিএম-এর উচিৎ বিজেপি-কে রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করা।
 
বলিষ্ঠ সিপিএম নেতার কথাকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি-এর রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,  পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার ফলেই তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরতে চাইছে সিপিএম।
 
অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি বিরোধিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিকে বিজেপি-এর বিরোধিতা করছেন, অন্যদিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি  নির্বাচনে বিজেপি নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানিকে চাইছেন।
 
দুই দলের নিচু তলার সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে কথাতে বোঝা যাচ্ছে সিপিএম এবং তৃণমূল কংগ্রেস একসঙ্গে বিজেপি বিরোধিতায় পথে নামতে পারে এই তত্ত্ব তাদের অবাক করেছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের একটি অংশ মনে করছে, বাধ্য হয়েই সিপিএম-এর মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠেছে।
 
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপি-এর দ্রুত উত্থান যে, সমস্ত দলকেই অস্বস্তিতে রেখেছে সে কথা সহজেই অনুভব করা যায়। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দামামা বাজবে। মূলত গ্রামাঞ্চল ভিত্তিক এই নির্বাচনে রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি-এর শক্তি কতোটা সেটার একটা পরিষ্কার হিসেব পাওয়া যাবে।
 
এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যদি বিজেপি ভালো ফল করে তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অবাক করা কিছু সমীকরণ সৃষ্টি হলেও হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
 
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ এর লোকসভার আগে বলিষ্ঠ সিপিএম নেতা গৌতম দেব আওয়াজ তোলেন, কংগ্রেস ও বামদল এক হয়ে মাঠে নামুক। প্রথম দিকে বাম দলগুলো সে কথায় আমল না দিলেও পরে কিন্তু সে পথেই হাঁটে। এখন দেখার বিষয়, ২০১৭ এ তার কথা কতটা গুরুত্ব পায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ৭ মে , ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।