রাজ্য বলে ইচ্ছা করে ব্যারেজ থেকে পানি ছেড়ে ‘ম্যানমেড’ বন্যার সৃষ্টি করেছে কেন্দ্র, আর কেন্দ্র বলে বিপদসীমার মধ্যে পানি বইছিলো ব্যারেজগলোতে। বাকবিতণ্ডা যাই হতে থাকুক না কেনো, মানুষকে তো খেয়েপরে বাঁচতে হবে।
ইতিমধ্যে বহু ঘর-বাড়ি-রাস্তা সয়লাব হয়ে গেছে পানিতে। পানির নীচে চলে গেছে চাষের জমি সমেত সবজিও। জানা যাচ্ছে, তারই প্রভাব পড়ছে সরাসরি বাজারগুলোতে। অন্তত এমনটাই বিক্রেতাদের যুক্তি। বাজারে ঘুরে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েকদিনের মধ্যে অনেক সবজির দাম বেড়ে গেছে।
দক্ষিণ কলকাতার লেক মার্কেট এলাকার বাজার করতে এসেছেন স্বপনবাবু, দামের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জানালেন, কিছু এলাকা ডুবেছে ঠিকই। কিন্তু, তার জন্য এত দাম? যে লংকা কিছু দিন আগে কেজি প্রতি ৫০ রুপিতে কিনেছি, সেটাই এখন ১১০ রুপির উপরে। শুধু লঙ্কা কেনো, সব সবজিরই দাম বেড়ে গেছে কদিনে। মানুষ খাবে কী?
স্বপনবাবুর ক্ষোভ যে অমূলক নয়, তা বাজার করতে বেরিয়ে নিত্যদিন টের পাচ্ছেন ক্রেতারা। কলকাতায় এখন বেগুনের দাম কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ রুপি। শসার দাম কেজি প্রতি ৭০ রুপি। টমাটোর দাম কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ রুপি। ক্যাপসিকামের দাম কেজি প্রতি ৮০ থেকে ৯০ রুপি। উচ্ছে কেজি প্রতি ৭০ রুপি। অথচ কিছুদিন আগে পর্যন্তও এসব সবজির দাম অন্তত বিশ থেকে ত্রিশ রুপি কম ছিল। কমবেশি একই অবস্থা কলকাতাসহ জেলাগুলোর বাজারগুলোতেও।
হাওড়ার একটি বাজারে কথা হচ্ছিল কয়েকজন সবজি বিক্রেতার সঙ্গে। তাদের কথায়, হাওড়াতে বাজারে যেখানে এখন পটলের দাম কেজি প্রতি ৪০ রুপি কিছুদিন আগে সেখানে তা ২০ থেকে ২৫ রুপি ছিল। ঝিঙের দর বর্তমানে ৫০ রুপি। আগে তা ছিল ২৫ থেকে ৩০ রুপি। কয়েকদিনের মধ্যে শসার দাম দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ রুপি প্রতি কেজিতে। তাদের দেওয়া তথ্য বলছে, বর্তমানে ঢেঁড়সের দাম কেজি প্রতি ৪০ রুপি। কিছুদিন আগে তা ছিল ২০ রুপি। কয়েকদিনের মধ্যে দ্বিগুণ দাম হয়েছে লাউ, ঝিঙে সহ চিচিঙ্গেরও।
কলকাতার শিয়ালদহ কোলে মার্কেটের পাইকারি বাজারে কথা হচ্ছিল কয়েকজন আড়তদারের সঙ্গে। তাদের বক্তব্য, যেসব জায়গা থেকে সবজি আসে, তেমন বহু এলাকাই বর্তমানে পানির নীচে। দ্রুত পানি না নামলে সবজির দাম আরও চড়বে বলেই আশঙ্কা তাদের।
কিন্তু, সব জায়গায় তো বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি? বিক্রতাদের কথায়, এটা ঠিকই যে সব জায়গায় মাঠে পানি উঠে যায়নি। কিন্তু, জেলার বহু জায়গাতেই রাস্তা পানির নীচে চলে গিয়েছে। তাতে সবজি বোঝাই ট্রাক সুষ্ঠুভাবে চলাচল করতে পারছে না। সব মিলিয়ে দাম বাড়ছে সবজির।
যদিও ক্রেতাদের একাংশের বক্তব্য, বাজারে আগুন দামের পেছনে শুধু পানি সমস্যা না। এমন কিছু ঘটেনি যেখানে রাতারাতি দাম বাড়বে। এই সময়টাকে সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়ার চক্রান্তে লিপ্ত থাকে। প্রতিবারই বর্ষার মধ্যে এদের কমবেশী বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। মমতা বন্দোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর কয়েকবার বাজার ঘুরে এদের ধরপাকড় শুরু করেছিলেন। তখন আবার সব ঠিক হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও তেমন কিছু হচ্ছে কি না, প্রশাসনকে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।
কোরবানি ও পূজার আগে সবারই বাড়তি খরচ হয়। তার সঙ্গে বাজারের দরও আগুন থাকলে পকেটের চাপ অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন কলকাতার ক্রেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
জেডএম/