শুধু রোববার কেন সোমবারও (০৯ এপ্রিল) জামাকাপড়, পোশাকের বাজারের ভিড় মনে করিয়ে দিয়েছে দুর্গাপুজো বা ঈদের আগে শেষের সময়গুলো। চৈত্রের শেষে আসন্ন নববর্ষে নতুন জামাকাপড় পরার প্রথা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
ফলে সব মিলিয়ে সোমবারও নিউমার্কেট, গড়িয়াহাট থেকে উত্তরের হাতিবাগান থেকে শুরু করে অভিজাত শপিং মলেও ছিল চৈত্রের বিক্রি ছিল জমজমাট। স্কুল, অফিস শেষের সময় অর্থাৎ দুপুরের পর থেকে সময় যত সন্ধ্যার দিকে গড়িয়েছে, ভিড় ততই বেড়েছে।
ক’দিন ধরে কলকাতার বাতাসে গুমোট পরিস্থিতি থাকলেও গত শনিবার (০৭ এপ্রিল) রাতে কলকাতায় ঝড়বৃষ্টির কারণে সোমবারও তা অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছয়নি। ফলে বহু মানুষই এদিন বেরিয়ে পড়েছেন চৈত্রের কেনাকাটা করতে। আর সেলের বাজারে শুধু যে জামাকাপড়ই সস্তাতে পাওয়া যাচ্ছে এমন নয়।
বাসন-কোসন, আসবাব পত্র, সাজগোজের দোকানেও চৈত্র সেল চলছে। কেউ কেউ আবার দোকানের বাইরে বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন ‘চৈত্র সেল চলছে’। সেখানেও ভিড় জমজমাট চোখে পড়ার মতো।
ফুটপাতের দোকানগুলোতেই বেশি ভিড়। তবে ভিতরের স্থায়ী দোকানেও ক্রেতাদের ভিড় আছে। চৈত্র সেলের দৌলতে প্রায় হাজার রুপির শাড়ি ৪৫০ থেকে ৬৫০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। শার্ট ও প্যান্টের পিসও অনেকটাই। যেখানে রেডিমেড পাঞ্জাবী কমবেশি ৫০০ রুপিতে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে পাঞ্জাবীর কাপড় মিটারে ৮০ থেকে ১৩০ রুপিতে পাওয়া যাচ্ছে।
কলকাতায় এবার পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে। ধুতির কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবী বানানো। সেক্ষেত্রে রঙ বে-রঙের ধুতির কাপড় বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ রুপির মধ্যে। আবার অপর দিকে শাড়ির পর নারী সৌন্দর্য্যের অন্যতম আভূষণ থ্রি পিচের দাম শুরু হচ্ছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৮০০ এর মধ্যে। অন্য সময় যা বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ১৫০০ এর মতো।
অনেকখানি সস্তায় কিনে মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন গড়িয়ার বাসিন্দা রত্না বিশ্বাস। পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। বেশ উচ্ছ্বসিত এই নারী বলেন, এবার চৈত্র সেল বেশ ভালো সময়েই বলতে হবে। ইংরেজি মাসের সবে শুরু হওয়ায় মাইনেও সদ্য হয়েছে। ফলে হাত খুলে কেনাকাটা করার সুযোগ মিলেছে।
প্রশ্ন করেছিলাম, সেলের সময় নাকি কেনা জিনিসপত্র ভালো গুণমানের হয় না? উত্তরে রত্না বললেন, আমি প্রতিবছরই চৈত্র সেলে কেনাকাটা করি। এরকম কোনো অভিজ্ঞতা আমার অন্তত হয়নি।
সপরিবারে কেনাকাটা করতে নিউ মার্কেট এসেছিলেন দক্ষিণ ২৪পরগনার বাসিন্দা কাকলী সাহা। হাতে জামকাপড় ভর্তি চারটি ব্যাগ নিয়ে পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তার স্বামী ও মেয়ে। কাকলী জানালেন, বছরে দুইবার কেনাকাটা করেন সপরিবারে। এক দুর্গাপুজোর আগে, আর এই চৈত্র সেলের সময়।
‘শুধু নিজেদের জন্য নয়, আত্মীয়-পরিজনদের জন্যও এখান থেকে সেলে বেশ কিছু পোশাক কেনা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার থেকে সপরিবারে চৈত্র সেলের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন অশোক হালদার। স্ত্রীর দিকে চোখের ইশারা করে বললেন, ওঁর জোরাজুরিতেই আসতে হয়েছে। আমাদের শহরেও তো সব দোকানে সেল চলছে। কিন্তু গিন্নির ইচ্ছে, এবার কেনাকাটা করতে হবে গড়িয়াহাট থেকে। অগত্যা এসে পড়েছি। এখন বালীগঞ্জ থেকে ট্রেন ধরে ফিরতে হবে।
স্থানীয় দোকানি মহম্মদ ইলিয়াস বলেন, ভিড় যত দেখছেন, বিক্রি কিন্তু ততটা নয়। কেনাকাটা করবেন হয়তো একজন, সঙ্গে এসেছেন আরও দুই তিনজন। একটু ঘুরলেই এরকম উদাহরণ অনেক পাবেন এই ভিড়ের মধ্যে।
ভালোবাসা, ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ নিয়েই পয়লা বৈশাখের আগে চলছে কলকাতায় চৈত্র সেলের কেনাকাটার আরও একটি উৎসব। উৎসব বলার কারণ বছরের অন্য সময় সামর্থ্য ও সময় থাকলেও বছরে এ দিনগুলো তো আর বারবার আসে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৮
এসএস/এমএ