ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

নরওয়েতে আইনি জটিলতায় সন্তানের কাছ-ছাড়া বাঙালি দম্পতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১১
নরওয়েতে আইনি জটিলতায় সন্তানের কাছ-ছাড়া বাঙালি দম্পতি

কলকাতা: নরওয়ে সরকারের আইনি জটিলতায় নিজের দুই সন্তান কাছ-ছাড়া প্রবাসী ভারতীয় বাঙালি অনুরুপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্য দম্পতির। দুই সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আসায় তারা এখন ভারত সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দ্বারস্থ হয়েছেন।



নরওয়ে আদালতের নির্দেশে এখন তাঁরা সন্তানদের সঙ্গে বছরে মাত্র দুবার দেখা করতে পারবেন। কারণ, তারা নাকি ছেলে-মেয়ের দেখাশোনা ঠিকভাবে করতে পারছেন না। এই অভিযোগেই নরওয়ে সরকার শিশু দুটিকে তাদের বাবা-মার কাছ থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। শিশু দুটিকে অন্য পরিবারের কাছে ইতিমধ্যেই দত্তকও দিয়ে দিয়েছে সেদেশের সরকার।

আইনের জটে সন্তানদের ফেরত না পেয়ে অসহায় বাবা-মার আর্জি, রাজ্য সরকার যেন বিদেশমন্ত্রকের সাহায্য নিয়ে তাঁদের দুই সন্তানকে ফিরে পাওয়ার ব্যবস্থা করে।

অনুরুপ ভট্টাচার্য এবং সাগরিকা ভট্টাচার্যের প্রথম সন্তান অভিজ্ঞানের জন্ম হয়েছিল কলকাতাতেই। জন্মের কিছু সময় পর ২০০৯-এর ডিসেম্বরে অভিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়ে অসলো চলে যান অনুরূপ ভট্টাচার্য। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন নরওয়ের অসলোরই বাসিন্দা অনুরূপবাবু।

এপর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। সমস্যা শুরু হয় অভিজ্ঞানকে যখন স্থানীয় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, অভিজ্ঞান নাকি বেশিরভাগ সময়ই ক্লাসরুমের এককোণে চুপচাপ বসে থাকত। মাঝেমধ্যে তাকে মেঝেতে মাথা ঠুকতে দেখা যেত বলেও অভিযোগ। অভিজ্ঞানের এই আচরণকে অস্বাভাবিক বলে আখ্যা দেয় ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ।

যদিও অভিজ্ঞানের মা সাগরিকা ভট্টাচার্য কলকাতার সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, কিন্ডারগার্টেনে একমাত্র নরওয়েজিয়ান ভাষায় পড়ানো এবং কথোপকথন হয়। আর সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া অভিজ্ঞানের কাছে সেখানকার ভাষা বোঝা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। যেকারণে সে চুপচাপ থাকত।

এরপর থেকেই শুরু হয়ে যায় নরওয়ের এক শিশু অধিকার রক্ষাসংক্রান্ত সংস্থার সর্বক্ষণের হস্তক্ষেপ। এরই মধ্যে জন্ম হয় অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় সন্তানের। আদর করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন তারা ঐশ্বর্য। কিন্তু সেই সুখের  সময় বেশিদিন টেকেনি। দুই শিশুকে নিয়ে একই ঘরে থাকত সাগরিকারা।

সেদেশের সরকারি শিশু সংস্থার অভিযোগ, কেন শিশুদের আলাদা ঘরে রাখা হয়নি? কেন হাত দিয়ে তাদের খাবার খাওয়ানো হয়? অতএব নরওয়ের আইন অনুযায়ী শিশুর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে দুই সন্তানকেই কেড়ে নেওয়া হয় বাবা-মার থেকে।

স্কুল থেকে প্রথমে অভিজ্ঞানকে ও পরে অসলোর বাড়ি থেকে ছোট্টো ঐশ্বর্যকে নিয়ে যায় তারা। গত সাত মাস বাবা-মার থেকে দূরে দত্তক নেওয়া পরিবারে দিন কাটছে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যর। সেখানেও সারা দিন বাবা-মার জন্যই কাঁদছে তারা। যখন সাগরিকা ও অনুরুপ ভট্টাচার্য তাদের সঙ্গে দেখা করতে যান, কিছুতেই বাবা-মাকে ছাড়তে চায়না ছোট্টো দুই শিশু।     
 
সন্তানদের ফেরত পেতে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন থেকে আদালত, সবার কাছে বারবার ছুটে গেছেন তারা।
 
কলকাতা থেকে অনুরূপ ভট্টাচার্য ও সাগরিকা ভট্টাচার্যের পরিবারের লোকজনও গিয়েছেন নরওয়েতে। আবেদন করা হয়েছিল, অন্তত তাদের হেফাজতে দেওয়া হোক দুই সন্তানকে। কিন্তু নরওয়ের আদালত সেই আর্জিও খারিজ করে দেওয়ায় সেই পথও এখন বন্ধ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।