শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হার্টের সমস্যা নিয়ে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
কৃষ্ণা বসু ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি), বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ। নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর প্রধান কৃষ্ণা বসু দীর্ঘ ৪০ বছর অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এই অধ্যাপিকার অসংখ্য বই রয়েছে। তার মধ্যে নেতাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণামূলক বই বেশ জনপ্রিয়।
এদিকে কৃষ্ণা বসুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কলকাতার বিভিন্ন মহলে। আর কিছুক্ষণ পর তার মরদেহ নেতাজির বাসভবনে আনা হবে। সেখানে তাকে শেষবারের মতো দেখতে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
এই বাড়িতে ২০১৮ সালের ২৬ মে শেষবার এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে জড়িয়ে ধরেছিলেন কৃষ্ণা বসুকে। দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতা করেছিলেন দুইজনে। সে সময় শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে কৃষ্ণা বসুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন জামদানি শাড়ি, মিষ্টি ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ আর অনেক কিছু। কৃষ্ণা বসুও উপহার হিসেবে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর রেকর্ড করা দুর্লভ ভয়েজ, জন্মদিনে নেতাজিকে পাঠানো শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি। সঙ্গে তুলে দিয়েছিলেন নেতাজির অবিভক্ত সোনার বাংলা নিয়ে কবিতা। এখানেই শেষ দেখা হয়েছিল দু’জনের। শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
কৃষ্ণা বসুর জন্ম ১৯৩০ সালে অবিভক্ত ভারতের ঢাকা শহরে। বাবা চারুচন্দ্র চৌধুরী বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সচিব পদে ছিলেন। ১৯৫৫ সালে সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎ বসুর ছেলে শিশির কুমার বসুর সঙ্গে বিয়ে হয় কৃষ্ণা দেবীর। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর হন। পরে দক্ষিণ কলকাতার সিটি কলেজে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। তবে, তার পরিচিতির ব্যাপ্তি ঘটে নেতাজি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে। তিনি কাউন্সিল অব নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর প্রধান ছিলেন। নেতাজিকে নিয়ে তিনি অনেক লেখালিখি করে গেছেন।
১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়ে প্রথম সাংসদ হন তিনি। এরপর কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই মমতার সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন। কৃষ্ণা বসু টানা তিনবার সাংসদ থাকাকালীন কেন্দ্রের বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিদেশ মন্ত্রক বিষয়ক কমিটির চেয়ারপার্সনও ছিলেন তিনি।
শুধুই শিক্ষাবিদ নন, সমাজকর্মী হিসেবেও তার পরিচিতি। ট্রাস্ট অব ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে তার।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
ভিএস/এএটি