ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কি আছে লোকপাল বিলে

সুকুমার সরকার, এডিশনাল আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১১
কি আছে লোকপাল বিলে

ঢাকা : ২০১১ সাল ভারতের নানা ঘটনার মধ্যে অন্যতম অংশ জুড়ে ছিল লোকপাল বিল। এ বিল নিয়ে সর্বত্র ছিল তুমুল আলোচনা।

এ বিলের বিরুদ্ধে দারুণ সরব ছিলেন আন্না হাজারে। শুধু মুখেই সরব নয়। রীতিমত অনশন করে সর্বত্র আলোচনার ঝড় তুলেছেন তিনি। এ ঝড় বইছে এখনও।

ভারত জুড়ে চলা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা মধ্যেই লোকসভায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় পাস হল লোকপাল বিল। ১২টি সংশোধনীসহ ৩২১-৭১ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাস হল এদিন।  

অবশ্য প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ও বামদলগুলির বিরোধীতা ও দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন না পাওয়ায় বিলটি সাংবিধানিক মর্যাদা পেল না ।

সংসদে লোকপালে লোকায়ুক্তের সংস্থান নিয়ে বিরোধীদলের বেঞ্চ থেকে সরকারের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন গত বিজেপি সরকারের তথ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তার বক্তব্য- সরকারের পেশ করা লোকপাল বিল অসাংবিধানিক ।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই বিল দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী । লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী বলেন, লোকায়ুক্ত গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নির্দেশ মানতে রাজ্যকে বাধ্য করা যায় না।

লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনার জন্য শীতকালীন অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সংসদে লোকপাল বিল পেশ করা হয়।

এদিকে সরকারের আনীত এই বিলের প্রতিবাদে বুধবার থেকে অনশন শুরু করছেন আন্না হাজারে। তবে, লোকপাল বিল নিয়ে সংসদই যে শেষ কথা বলবে, ইতোমধ্যেই সেকথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি।

চলতি অধিবেশনে বিলটি পাশ করানোই এখন সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হুইপ জারি করে দলীয় সদস্যদের মঙ্গলবার থেকে তিনদিন সংসদে উপস্থিত থাকতে বলেছে কংগ্রেস। ইউপিএ জোটসঙ্গীদেরও অধিবেশনে হাজির থাকার কথা  বলা হয়েছে। কী বলা আছে লোকপাল বিলে

০ কেন্দ্রে গঠিত হবে লোকপাল এবং রাজ্যে লোকায়ুক্ত।

০ লোকমান হবে চেয়ারম্যান সহ নয় জন সদস্য  বিশিষ্ট। লোকায়ুক্তও হবে তাই।


০ যিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি ছিলেন অথবা কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তি চেয়ারম্যান হবেন।

০ ৫০ শতাংশ হবেন বিচার বিভাগীয় সদস্য অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অথবা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন এমন কেউ। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ হবেন তফসিলি জাতি-উপজাতি, ওবিসি, মহিলা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

ন্যূনতম বয়স হবে ৪৫ এবং সর্বোচ্চ ৭০। কোনও বিধায়ক বা সাংসদ এর সদস্য হবেন না।

০ চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার, লোকসভার বিরোধী নেতা, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি অথবা তাঁর মনোনীত কোনও বিচারপতি এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির কমিটি। এঁদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছরের।

০ লোকপালের অধীনে তদন্ত আধিকারিক এবং শাস্তি সুপারিশের অধিকারী হবে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সচিবের পদ মর্যাদার।

০ লোকপালের কাছে প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী সাংসদ এবং সরকারি সব কর্মীর (প্রথম  থেকে চতুথ শ্রেণি) বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো যাবে। এর জন্য কোনও অনুমতি লাগবে না। তবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে বিদেশ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, পরমাণু শক্তি এবং মহাকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ জানানো যাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য লোকপালের ফুলবেঞ্চের শুনানি করতে হবে এবং তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের অনুমতি লাগবে। শুনানি হবে ‘ইন-ক্যামরা’য়।

০ চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে লোকপাল সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে তদন্তের জন্য পাঠাবে। সমিতি এবং ট্রাস্টের বিরুদ্ধেও তদন্ত করা যাবে।

বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য পান। অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে বিশেষ আদালতে মামলা দাখিল করা যাবে। প্রয়োজনে দুনীতিগ্রস্থ ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতাও থাকছে।

০ একশো জন সাংসদ প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির কাছে লোকপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন। লোকপালেন কাছে প্রত্যেক পাবলিক সার্ভেন্ট সম্পত্তির বিবরণ দেবেন। অসত্য অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ এক বছর জেল এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত  জরিমানা হতে পারে।

লোকপাল প্রতি বছরে রাষ্ট্রপতির কাছে বার্ষিক  রিপোর্ট দেবে।

এদিকে ভারতীয় সংসদে পেশ হওয়া লোকপাল বিলের প্রতিবাদে মুম্বাইয়ে অনশন শুরু করেছেন আন্না হাজারে। কলকাতাতেও বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছেন আন্না হাজারের সমর্থকেরা।

উত্তর কলকাতার মহাজাতি সদনের সামনে মঙ্গলবার থেকেই আন্না হাজারের ৩ জন সমর্থক অনশন শুরু করেছেন। আন্না হাজারের অনশন চলাকালীন টানা তিনদিন তারাও অনশন করবেন । এছাড়াও রিলে অনশনে বসছেন ১৪ জন।

এরআগেও আন্না হাজারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁরা সামিল হয়েছিলেন।

শহরে প্রথম দিনে সে রকম সমর্থন না মিললেও বুধবার থেকে বহু মানুষ তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে।

এদিকে কলকাতায় তিনদিনের অনশন কর্মসূচির পাশাপাশি রাজ্যেও এই ইস্যুতে জেল ভরো কর্মসুচির ডাক দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রায় ২ হাজার সমর্থক এই কর্মসূচিতে সামিল হবেন বলে আশা প্রকাশ করা   হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।