আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরা সরকারের মৎস্য দফতর জলাশয়ে প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি কেস কালচারের মাধ্যমে মাছ চাষে জেলেদের উৎসাহিত করছে।
কেস কালচার পদ্ধতিতে বড় জলাশয়ে প্লাস্ট্রিকের ভাসমান একাধিক ব্লক জোড়া লাগিয়ে চার কোনার ফ্রেম তৈরি করা হয় এবং ফ্রেমের নিচে ও উপরে জাল লাগিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, এ সুবিধাগুলোর কথা চিন্তা করে মৎস্য দফতর ত্রিপুরা রাজ্যের জেলেদেরও এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে উৎসাহিত করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে গোমতী জেলার অন্তর্গত ডুম্বুর জলাশয়ের জেলেদের মধ্যে কেস বিতরণ করা হয়েছে এবং তাতে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। জেলেদের সমবায়ের ভিত্তিতে এগুলো বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য দফতর ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে এ প্রকল্পটি রাজ্যে চালু করেছে। এগুলোতে জেলেরা সফলভাবে মাছ করতে পারছেন দেখে গত বছর ৬৪টি নতুন কেস বিতরণ করা হয়। এ বছর আরও ৬৪টি নতুন কেস ডুম্বুরের মাছচাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। সব মিলিয়ে ডুম্বুরের দেড় হাজার মৎস্যচাষিকে এ প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে।
এখন ডুম্বুরের পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য জেলার বড় জলাশয়গুলোতে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হবে। এর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ২৬০টি কেস বন্টন করা হবে জেলেদের মধ্যে। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পের জন্য সরকার প্রায় ৩৫ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। যেসব জেলেকে সমবায়ের মাধ্যমে এ প্রকল্পে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের কেস থেকে শুরু করে পোনা মাছ, মাছের খাবার পর্যন্ত দফতর থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কী করে কেসের মধ্যে মাছ চাষ করতে হয়, রাজ্যের বাইরে পাঠিয়ে সে প্রশিক্ষণও দিয়ে আনা হয়েছে তাদের। এ পদ্ধতি রাজ্যের মাছের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখবে বলেও জানান অধিকর্তা ডি কে চাকমা।
ডুম্বুর জলাশয় প্রথাগত পদ্ধতিতে মাছচাষের পাশাপাশি উন্নত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের সুবিধা পেয়ে খুশি জেলেরা।
সুবিধাভোগী জেলে ধনঞ্জয় ত্রিপুরা বাংলানিউজকে জানান, গত দু’বছর ধরে তিনি এ কেস কালচার পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন। মাছ চাষ শুরুর আগে দফতর থেকে তাকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে খুব দ্রুত মাছের বৃদ্ধি হয়, সামান্য খাবার দিলেই চলে, কারণ যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়, তা জালের মধ্যে থাকায় সব খাবারই মাছ খেয়ে নিতে পারে, খাবারের অপচয় হয় না। তাছাড়া জালের গায়ে শৈবাল জন্মায়, যা মাছের প্রিয় খাবার। এসব কারণে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। তাছাড়া জলাশয়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকায় মাছের গায়ে জলজ অন্যান্য পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না। এ কারণে মাছের রোগবালাই প্রায় হয় না বললেই চলে। চাষ শুরুর পর প্রতিবছর এ কেস থেকেই তিনি মাছ বিক্রি করে দুই লাখ রুপি আয় করছেন।
রাজ্য সরকারের মৎস্য দফতরের উদ্যোগে তিনিসহ তার মতো ডুম্বুরের অন্যান্য সুবিধাভোগী জেলেরাও খুশি।
দফতরের কাছে তাদের এখন একটিই আবেদন, তাদের যেন আরও বেশি কেস দেওয়া হয়, তাহলে তাদের আরও বেশি মুনাফা হবে।
ডুম্বুর ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র, জলাশয়ের মধ্যে নৌকায় করে পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তাই নৌকা চলাচলের রাস্তা রেখে জলাশয়ের পার্শ্ববর্তী স্থানে ভাসমান কেসগুলো স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোতে মূলত রুই, কাতল, পাঙ্গাস ইত্যাদি মাছ চাষ করা হচ্ছে। জলাশয়ে ভাসমান কেসগুলো থেকে মাছ যাতে লাফ দিয়ে মূল জলাশয়ের পানিতে চলে না যেতে পারে, সে জন্য উপরেও জাল দিয়ে ঢাকা থাকে। এক কথায় সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এ মাছ চাষ করার জন্য এ কেস এবং অনুষঙ্গিক সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২০
এসসিএন/এসআই