ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৪০ কৃষকের আত্মহত্যা!

রক্তিম দাশ, ব্যুরো চিফ, কলকাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১২

কলকাতা : ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন কৃষক আত্মহত্যা করছেন! বিশিষ্ট সাংবাদিক পি সাইনাথের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ তথ্য ও কৃষি সঙ্কটের কারণ খতিয়ে দেখতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সফর করবে কৃষি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি|

কৃষি সঙ্কটে জেরবার আত্মঘাতী কৃষক পরিবারের সঙ্গেও কথা বলবে কমিটি।

এমনটাই বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ভারতের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া।

জানা গেছে, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সফর শুরু হবে। মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের কৃষি সঙ্কটপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে যাওয়া হবে। বিদর্ভে আত্মঘাতী কৃষক পরিবারগুলোর সঙ্গে সঙ্কট নিয়ে কথা বলবেন সদস্যরা। পশ্চিমবঙ্গেও সফর করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। এর আগে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের পরিকল্পনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্য সফর করেছে কমিটি।
 
বাসুদেব আচারিয়া বলেন, সারাদেশে কৃষিসঙ্কট চরম আকার নিয়েছে। কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন সংগঠন এ নিয়ে তাদের রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে সঙ্কট মোকাবিলায় কেন্দ্র কিছু পদক্ষেপ নিলেও তা যথেষ্ট কিনা তা খতিয়ে দেখবে কমিটি। সংসদে কৃষিমন্ত্রী শারদ পাওয়ার সঙ্কট খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠনের আশ্বাস দিলেও তা আজও গঠন হয়নি।
 
তার আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত কৃষি সঙ্কটের কারণ খতিয়ে দেখে তা সুরাহায় নির্দিষ্ট সুপারিশসহ মন্ত্রকে রিপোর্ট জমা দেবে বলে জানিয়েছেন আচারিয়া।

এদিকে কৃষি সঙ্কটে আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রের তরফে ঋণ মকুব ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্যের কিছু প্রকল্প ঘোষণা হলেও ঐ স্রোত বন্ধ হয়নি। গত বছর ২ আগস্ট সংসদে আত্মঘাতী কৃষক নিয়ে মন্ত্রীর জবাবে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ফসল ফলনে ব্যর্থতা, ফসলের দাম না পাওয়ায় কৃষকরা আজও আত্মঘাতী হচ্ছেন কিনা প্রশ্ন রেখেছিলেন প্রায় এক ডজনের বেশি সাংসদ। লিখিত জবাবে কৃষিমন্ত্রী শারদ পাওয়ার ২০০৮ থেকে ১০১১ এই চার বছরে ৩৫টি রাজ্যের কৃষক আত্মহত্যার তালিকা প্রকাশ করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সূত্রে পাওয়া তথ্যে ফসল না হওয়া, খরা, বন্যায় ফসলের ক্ষতি এবং ধার দেনায় বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে যেসব কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুসারে ৩৫টি রাজ্যের মধ্যে ৬টি রাজ্যে চার বছরে আত্মঘাতী কৃষকের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৮২ জন।
 
কেন্দ্রশাসিতসহ বাকি ২৯টি রাজ্যে ২০১১ সাল অবধি কোনো কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা নেই। এই রাজ্যের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে ঐ চার বছরে কৃষকের আত্মহত্যার কোনো ঘটনা নেই।
 
পশ্চিমবঙ্গের হিসাব ২০১০’র ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে সে সময় যে ছয় রাজ্যে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে কেরালাসহ অন্ধ্র, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং পাঞ্জাব।
 
ছয়টি রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। চার বছরে মোট আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৪ জন। এরপরেই রয়েছে অন্ধ্র। সংখ্যা হলো ১ হাজার ৭২৫ জন। কর্ণাটকে ৫৫৩, কেরালা ৯৪, পাঞ্জাব ৫৫ এবং তামিলনাডু ১ জন।

এদিকে শারদ পাওয়ার দাবি করেছেন, ২০০৬ সাল থেকে কৃষি সঙ্কট মোকাবিলায় উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র সরকার।
 
লিখিত জবাবে কৃষি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত জানিয়েছেন, অন্ধ্র, কর্ণাটক, কেরালা, মহারাষ্ট্রে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন প্যাকেজ চালু করা হয় ২০০৬ সালে। ঐ চার রাজ্যে ৩১টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রকল্প প্যাকেজে ১৯ হাজার ৮০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়।
 
রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশন, জাতীয় হর্টিকালচার মিশন, মাটি উর্বরতা বৃষ্টি প্রকল্প, ফসলের ন্যূনতম মূল্যের ব্যবস্থা, এছাড়া কম সুদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। মন্ত্রী দেশজুড়ে কৃষি সঙ্কট যে তীব্র আকার নিয়েছে তা জবাবে স্বীকার করেছেন।
 
কিন্তু কেন্দ্র গত পাঁচ বছর ধরে নানা উদ্যোগের কথা শোনালেও তাতে যে আত্মহত্যার ঘটনা কমেনি তা পরিবেশিত তথ্যে স্পষ্ট। পাঞ্জাবের মতো সবুজ বিপ্লবের রাজ্যেও কৃষি সঙ্কটে কৃষকের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি।

অন্যদিকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ইতোমধ্যে দেশের কৃষি সঙ্কট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বহুজাতিক সংস্থায় কৃষিক্ষেত্রে আগ্রাসন নিয়ে চলছে আলোচনা। নয়া উদারবাদী নীতির ফলে কৃষিতে সরকারি বিনিয়োগ কমেছে। কৃষিকাজ আজ আর লাভজনক হচ্ছে না। ফলে ঋণে বিপর্যস্ত হচ্ছে কৃষক সমাজ। সংসদীয় কমিটির আলোচনায় এনিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে বলে জানান আচারিয়া।
 
তিনি বলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক পি সাইনাথ কৃষিতে আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। জমা পড়েছে এনিয়ে তথ্যচিত্র ‘নীরোস গেস্ট’ বা ‘নীরোর অতিথি’। বিদর্ভের আত্মঘাতী কৃষক পরিবারের মর্মন্তুদ ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ঐ তথ্যচিত্রে।

তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে সংবাদপত্রে লাগাতার ঐ ঘটনা প্রকাশের পর কেন্দ্রের তরফে বিভিন্ন কমিটি কৃষি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে। প্রধানমন্ত্রীও ঐ অঞ্চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও হাল কিছুই ফেরেনি। সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া কৃষি সঙ্কট মোকাবিলার আর কোনো রাস্তা নেই।

এদিকে, দু’চারটে প্রকল্প ঘোষণা হলেও পরিস্থিতির যে কোনো পরিবর্তন আসেনি তা সরকারি নানা তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তথ্য চিত্রে সাইনাথের দাবি গত দশ বছরে দেশে ২ লক্ষ কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন।

বিদর্ভের পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে ৮ ঘণ্টা প্রতিদিন লোডশেডিং চলে। সেই লোডশেডিং থেকে বাদ থাকে খালি বিদর্ভের মর্গ। কারণ প্রতিমুহূর্তে সেখানে চলে আসছে আত্মঘাতী কৃষকের লাশ। যা ময়নাতদন্ত করে আবার তুলে দিতে হচ্ছে পরিবারের হাতে। দেশজুড়ে আজ প্রতিদিনের আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা প্রায় ৪০।

বাংলাদেশ সময় : ১১৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।