কলকাতা: কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বুধবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হল উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের তৃতীয় পর্বের ভোটগ্রহণ।
ছত্রপতি শাহুজি মহারাজ নগর, বারাণসী, এলাহাবাদ, কাউসম্বি, সুলতানপুর, সন্ত রবিদাস নগর, জৌনপুর, চান্দৌলি, মিজার্পুর এবং শোনভদ্রার তৃতীয় দফার ভোটে ইভিএম বন্দি হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব উত্তর প্রদেশের এই ১০ জেলার ৫৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের জনমত।
এ পর্বে মোট ভোটদাতার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ। ১১ হাজার ৬০৭টি ভোট কেন্দ্রের ১৮ হাজার ৩৭৪টি পোলিং বুথে ভাগ্য নির্ধারিত হবে ১ হাজার ১৮ জন প্রার্থীর। এদের মধ্যে ৩ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ১ জন প্রতিমন্ত্রী ২৯ জন সাবেক বিধায়ক এবং ১৪ জন সাবেক মন্ত্রী।
উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- বিএসপির তিন প্রভাবশালী মন্ত্রী ইন্দ্রজিত্ সরোজ, নন্দগোপাল গুপ্তা ও ধর্মরাজ নিষাদ।
বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি ওমপ্রকাশ সিং, দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা তথা সাবেক স্পিকার কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী রীতা বহুগুণা যোশির ভাই শেখর বহুগুণা এবং এলাহাবাদের সমাজবাদী পার্টি সাংসদ রেবতীরমন সিংয়ের ছেলে উজ্জ্বলরমন সিংও রয়েছেন জনতার আশীর্বাদ পাওয়ার দৌড়ে।
রয়েছেন কুখ্যাত বাহুবলীরাও। তিহার জেল থেকেই আপনা দল টিকিটে ভোটে লড়ছেন প্রেম প্রকাশ সিং ওরফে মুন্না বজরঙ্গী। একাধিক খুন, অপহরণের মামলায় অভিযুক্ত সাবেক সাংসদ আতিক আহমেদকেও মনোনয়ন দিয়েছে আপনা দল।
অন্যদিকে নবগঠিত প্রগতিশীল মানব সমাজ-এর পতাকা নিয়ে জনতার দরবারে হাজির এ মুহূর্তে উত্তর-পূর্ব প্রদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাফিয়া ডন ব্রিজেশ সিং।
ডি-লিমিটেশনের আগে ২০০৭ সালের বিধানসভা ভোটে এই ১০টি জেলায় আসন সংখ্যা ছিল ৫২। এরমধ্যে বিএসপি ৩১, সমাজবাদী পার্টি ১১, বিজেপি ৬, কংগ্রেস ৩ এবং নির্দলীয় প্রার্থী ১টি কেন্দ্রে জিতেছিল। যদিও ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে এই সমীকরণ অনেকটাই বদলে যায়।
এই ১০ জেলার ১২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সমাজবাদী পার্টি ৬, বিএসপি ৩, কংগ্রেস ২ এবং বিজেপি ১টি আসনে জেতে। বিধানসভা কেন্দ্রওয়ারী হিসেবে ৫৬টি কেন্দ্রের মধ্যে সমাজবাদী পার্টি ২২, বিএসপি ২১, কংগ্রেস ৮ এবং বিজেপি ৪টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
এবার কল্যাণ সিংয়ের সঙ্গ ছাড়ায় মুসলিম জনভিত্তি পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী সমাজবাদী নেতৃত্ব। মুলায়ম সিং যাদবের দলের নেতাদের দাবি- তারা তৃতীয় দফায় অন্তত ৩০টি আসনে জিতবেন। অন্যদিকে জাঠ সম্প্রদায়, দলিত এবং উচ্চবর্ণের ভোটের পাশাপাশি সংরক্ষণ- তাস খেলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনগ্রসর অংশের সমর্থন পেতে সক্রিয় কংগ্রেস।
তারা সক্রিয় হয়েছে- আমেথি, সুলতানপুরের সাবেক দুর্গ পুণর্দখল করতে। তৃতীয় পর্যায়ের ভোটের প্রচারে তাই এই এলাকায় কার্যত মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন প্রিয়ঙ্কা বঢেরা।
পাশাপাশি নিজেরা জিততে না পারলেও পিস পার্টি, রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন দলের মতো ‘ভোট কাটা’ দলগুলোর প্রার্থীরা অনেক আসনেই ফলাফল বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
উত্তর প্রদেশের জনগণ আগামী ৫ বছরের জন্য রাজ্যপাট পরিচালনার দায়িত্ব কাদের হাতে তুললে দেবে ৬ মার্চ তা জানা যাবে। তবে প্রথম দফায় প্রবল বৃষ্টি সত্ত্বেও ভোটদানে মানুষের উৎসাহ এবং দ্বিতীয় দফাতেও সন্তোষজনক ভোটের হার থেকে ফলের দিশা সম্পর্কে একটা আগাম আঁচ পাচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
রাজ্যে পরিবর্তনের একটা চোরাস্রোত বইছে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে মিডিয়া। যদিও মায়াবতীর মুলুকে বেকারত্বের হার বাড়ার ফসল কোনো দল ঘরে তুলবেন- তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় দফায় ১০ জেলার ৫৬ আসনের ভোট তাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। পর্যায়ক্রমে সাত দিন ধরে এ ভোট গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৪৪৭ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১২