কলকাতা: হরতালের সমর্থনে মিছিল ও যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও সিপিএম নেতা নারায়ণ বিশ্বাসকে। মোট ২০ জনকে সেখান থেকে আটক করা হয়েছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী এ কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া হরতাল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কলোনি মোড়ে হরতালের সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, হরতাল সমর্থকরা এক সরকারি বাসের চালককে মারধর করে।
একটি বাস থেকে হরতাল সমর্থকরা যাত্রীদের জোর করে নামানোর চেষ্টা করলে বাধা দেন বারাসত কলোনি মোড়ের পিকেটে থাকা তৃণমূল সমর্থকরা। দুই দলে বচসা বেঁধে যায়। বচসা বড় আকার ধারণ করে। উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে নামে পুলিশ।
আবার বারাসতেরই চাঁপাডালি মোড়ে জোর করে যাত্রীদের অটো থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএম সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অটো চালককে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
মঙ্গলবারের ধর্মঘটে বিক্ষিপ্ত প্রভাব পড়েছে বাংলার বিভিন্ন জেলায়। হাওড়ার ডোমজুড় ও মাকড়দায় পথ অবরোধ করা হয়।
উত্তর চব্বিশ পরগনার কাঁকিনাড়ার নফরচাঁদ জুটমিলের সামনে সকালে মিছিল করে হরতাল সমর্থক এবং বিরোধীরা। মিছিল, পাল্টা মিছিল ঘিরে তৈরি হয় মারাত্মক উত্তেজনা।
এদিকে বর্ধমানের রূপনারায়ণপুর স্টেশনে রেল অবরোধ করে সিপিএম। লাইনের উপর পতাকা লাগিয়ে অবরোধে বসেন বামপন্থী সমর্থকেরা। এই অবরোধের জেরে ডাউন বাঘ এক্সপ্রেস আটকে পড়ে চিত্তরঞ্জন স্টেশনে। বৈদ্যনাথধাম-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস আটকে পড়েছে জামতাড়া স্টেশনে এবং মধুপুর স্টেশনে আটকে পড়েছে লালকিল্লা এক্সপ্রেস।
উত্তর দিনাজপুর, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি মোড়, এনবিএসটিসি বাস ডিপো এবং জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করে হরতালের সমর্থকরা। হামলা চালানো হয় কয়েকটি সরকারি বাসেও. ইট ছুড়ে বাসের জানলার কাচ ভেঙে দেওয়াও হয়েছে।
রায়গঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পুলিশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন হরতাল সমর্থক। অন্যদিকে, ইসলামপুরে সিপিএম সমর্থকদের পথ অবরোধ হটাতে লাঠি চার্জ করে পুলিশ। সকাল নটা পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮ জনকে।
এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে সকালে উত্তেজনা ছড়ায় কোচবিহারের শহরে। সকালে এনবিএসটিসি ডিপো থেকে নাটাবাড়ি যাওয়ার পথে হরতাল সমর্থকদের হামলার মুখে পড়তে হয় একটি সরকারি বাসকে। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে জখম হন দুই যাত্রী এবং বাস চালকও।
মুশির্দবাদের ফারাক্কায় সরকারি বাস ডিপোর সামনে পিকেটিং করে হরতাল সমর্থকরা। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের ফলে তৈরি হয় ব্যাপক যানজট। ফরাক্কায় একটি স্কুল খোলা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের বচসা বেঁধে যায়।
অন্যদিকে, নদিয়ার পলাশিতে অবরোধের ফলে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বহরমপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে ভাগীরথী এক্সপ্রেস। সাঁপুইতে ধর্মঘটীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা বাঁধে বলেও জানা গেছে।
পুরুলিয়ার আদ্রায় সংঘর্ষ বেঁধে গিয়েছে সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যেও। সকালে হরতাল সমর্থক ও বিরোধীদের মিছিল ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে স্টেট ব্যাঙ্কের একটি শাখা খোলা নিয়ে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
পূর্ব ঘোষণা মতো এদিন ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সংগঠনও হরতালের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকরা জোর করে আদ্রায় স্টেট ব্যাঙ্কের একটি শাখা খোলাতে যায় বলে অভিযোগ।
এই নিয়ে সিপিএম সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে তাদের। সিপিএম সমর্থকদের অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থকরা বেধড়ক মারধর করেন সিপিএম সমর্থকদের। এই ঘটনায় ১ ব্যক্তি আহতও হয়েছেন।
গোটা ঘটনায় কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে পুলিশ। ঝামেলার সূত্রপাতের সময় কাছাকাছি পুলিশকে দেখা গেলেও ঝামেলা থামানোর কোনও চেষ্টাই করেনি তারা। পরে অবশ্য পুলিশ ওই এলাকা থেকেই চলে যায়। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তেজিত হতে থাকে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১২