নয়াদিল্লি: উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে দলের শোচনীয় ফলাফলের নৈতিক দায় স্বীকার করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে চাইলেন রীতা বহুগুণা যোশি।
শুক্রবার দিল্লিতে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
২৪ আকবর রোড সূত্রে জানানো হয়েছে, রীতার বহুগুণা যোশির পদত্যাগপত্র গ্রহণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে লখনউ (ক্যান্টনমেন্ট) আসন থেকে জয়ী রীতা বহুগুণা যোশিকে এবার কংগ্রেস পরিষদীয় নেত্রীর দায়িত্ব দিতে পারে হাইকম্যান্ড।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরই রাজ্য কংগ্রেসের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রকাশ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ইস্তফা অন্তর্দলীয় কোন্দলকে নতুন মাত্রা দেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বৃহস্পতিবার সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে দলের ভরাডুবির জন্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছিলেন সুলতানপুরের কংগ্রেস সাংসদ সঞ্জয় সিং ও তার স্ত্রী অমিতা। সেই সঙ্গে নাম না করে কার্যত ভোট ক্যাচার হিসেবে গান্ধী-নেহরু পরিবারের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন তারা।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কড়া শব্দে সঞ্জয়-অমিতার সেই সমস্ত অভিযোগের জবাব দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রী রীতা বহুগুণা যোশি।
রাজ্য কংগ্রেস সূত্রে খবর, এবারের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব না পেয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ছিলেন সঞ্জয় । ভোটে তার বিধায়ক স্ত্রী অমিতা সিংও আমেঠি কেন্দ্রে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। এমতাবস্থায় মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন সঞ্জয় সিং।
কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সুলতানপুরে দলের প্রার্থীদের পরাজয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আমেঠির রাজা বলেন, দলের কোনো প্রার্থীই প্রচার বা নির্বাচনী রণকৌশল স্থির করার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
গোটা ভোটপর্বে তার কোনো ভূমিকা ছিল না বলে জানিয়ে সঞ্জয়ের সাফ কথা, আমি জানতাম, এক জন প্রার্থীও জিততে পারবে না। আর ঠিক সেটাই হয়েছে। নিজের বক্তব্য জানাতে অমিতাকে নিয়ে তিনি দশ জনপথবাসিনীর সঙ্গে দেখা করার কথাও জানান।
এক ধাপ এগিয়ে কংগ্রেসের ভোট-ভরাডুবির প্রসঙ্গ তুলে গান্ধী-নেহরু পরিবারের ক্যারিশমাকে কটাক্ষ করে অমিতা সিংয়ের মন্তব্য, আমার ধারণা, যুগ বদলেছে। জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী তারপর সোনিয়া গান্ধী হয়ে রাহুল, পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। আর আমরা যদি পারিবারিক রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের কথা বলি, তা হলে অখিলেশ যাদবও তো সেই ঐতিহ্যের ধারক।
সত্তরের দশকে সঞ্জয় গান্ধীর রাজনৈতিক অনুগামী হিসেবে পরিচিত সঞ্জয় সিং অতীতে কংগ্রেস ছেড়ে জনতা দল এবং বিজেপি করেছেন।
তার বৃহস্পতিবারের বক্তব্য শুনে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এবার শিবির বদলানোর সুনির্দিষ্ট উত্তরপ্রদেশের যাদব কুলপতির সঙ্গে সখ্য স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি।
সঞ্জয় ও অমিতার এই বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়ার পরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানান রীতা বহুগুণা যোশি।
তিনি বলেন, এ ভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে দোষারোপের পালা শুরু হলে তা হবে দলের প্রতি অন্যায়। তবে তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে ভোটে অন্তর্দলীয় অন্তর্ঘাতের কথা স্বীকার করে নেন প্রদেশ কংগ্রেস সভানেত্রীও।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১২