নয়াদিল্লি: ভারতীয় সাংবাদিক সৈয়দ মহম্মদ আহমেদ কাজমিকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ জেরা করছে বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি পুলিশের কাছে জবাবদিহি চাইলেন আদালত।
তবে শনিবার দিল্লি পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিনোদ যাদব দিল্লি পুলিশের মৌখিক বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হয়ে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং যেসব পুলিশ আধিকারিক কাজমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তাদের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন। এই সংক্রান্ত সরকারি রেজিস্টারও চেয়ে পাঠিয়েছেন আদালত।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লির আওরঙ্গজেব রোডে বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসরায়েলের কূটনীতিবিদসহ মোট তিনজন আহত হয়েছিলেন। এই বিস্ফোরণের পেছনে ইরানের হাত আছে বলে অভিযোগ করা হয়।
এর কিছুদিন পরে আচমকাই বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ মহম্মদ আহমেদ কাজমিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
কাজমি অভিযোগ করেছেন, দিল্লি পুলিশ ছাড়াও ইসরায়েলের অফিসাররা (ইসরায়েলের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, মোসাদ ইত্যাদি) তাকে প্রতিদিন জেরা করছে। নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে তারা সাদা পোশাকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন।
মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিনোদ যাদব বলেছেন, তদন্তকারী অফিসাররা সাদা পোশাকে জেরা করছেন এবং তাদের ‘নেম ট্যাগ’ লাগানো থাকছে না—এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় দিল্লি পুলিশের ‘বিশেষ সেল’ নিরুত্তর ছিল। তাই এই সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
কাজমির আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, তার মক্কেলের সঙ্গে পুলিশ ‘গবেষণাগারের শূকরের’ মতো আচরণ করছে। পুলিশ হেফাজতে তাকে চূড়ান্ত হেনস্তা করা হচ্ছে। শুধু দিল্লি পুলিশের অফিসাররাই নন, অন্য তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররাও জেরা চালাচ্ছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন মুখ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
এরপরেই মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে কড়া ভাষায় বলেন, কাজিম একজন মানুষ, কোনো সম্পত্তি নন।
দিল্লি পুলিশ অবশ্য আদালতকে জানিয়েছে, আইন মোতাবেকই কাজিমকে জেরা করা হচ্ছে, তাকে হেনস্তা করার অভিযোগ ঠিক নয়।
উর্দুভাষী সাংবাদিক কাজমি ইরান বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। বিস্ফোরণের ঘটনার দিনও তিনি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এই বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
দৃঢ়তার সঙ্গেই তিনি সেদিন জানিয়েছিলেন, ইরান এই ঘটনার পেছনে নেই। ৫৩ বছরের এই সাংবাদিককে গ্রেফতারের নেপথ্যে ইরানকে খোলাখুলি সমর্থন করাই অন্যতম কারণ বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিচিতজনেরা।
বিশিষ্ট সাংবাদিক সীমা মুস্তাফা এদিন সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, কাজমি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরায়েল দাবি করে এর পেছনে ইরানের হাত আছে। ভারত সরকার তখন বলে ইসরায়েল ঠিক বলছে না। তাহলে এরপর কী হলো যে ভারত সরকার নিজের অবস্থান বদল করে নিল? তাহলে তখন কি সরকার মনে করতো যে, এই ঘটনায় ইরান যুক্ত আছে? কাজমির মতো ভারতীয় নাগরিক যার ইরানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে, তাই তাকে গ্রেফতার করা হলো?
পুলিশের দাবি, বিস্ফোরণের ঘটনায় কাজমির যোগসাজশ আছে। কাজমির মোবাইল ফোনের কল-লিস্ট দেখে তাদের ধারণা ইরানের কিছু ‘সন্দেহজনক’ লোকের সঙ্গে তার যোগসাজশ আছে। পুলিশের আরও দাবি তার স্কুটার এবং গাড়িও নাকি বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতরা ব্যবহার করেছে।
কাজমির বড় ছেলে ২৩ বছরের এমবিএ ছাত্র সৌজাব জানিয়েছেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ঐ স্কুটারটি গত দু’বছর ধরে ব্যবহার করা হয়নি, তাদের বাড়িতে ওটা পড়ে আছে।
কাজমির আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, এখনও পর্যন্ত দিল্লি পুলিশ কাজমির বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ যোগাড় করতে পারেনি। সন্ত্রাসবাদী কাজে ব্যবহৃত একটি স্কুটার কোনো ব্যক্তি কেন তার ঘরে রাখতে যাবেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
কাজমিকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আগামী ২৩ মার্চ উত্তর প্রদেশের লখনউতে প্রতিবাদ মিছিল এবং ২৬ মার্চ সংসদ ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে।
শনিবার লখনউর অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য মৌলানা কালবে জাওয়াদ একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কাজমির গ্রেফতারের ঘটনায় সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে ফের একবার নিরীহ মুসলিমদের হেনস্তার ঘটনা সামনে এলো।
এদিকে, এই বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রধান চক্রান্তকারী মাসুদকে গ্রেপ্তার করার জন্য ইন্টারপোলের সাহায্য চাইলো দিল্লি পুলিশ। বর্তমানে মাসুদ মালয়েশিয়া পুলিশের হাতে আছে বলে জানতে পেরেছে দিল্লি পুলিশ। ব্যাঙ্ককে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ার পুলিশ মাসুদকে গ্রেপ্তার করেছে। দিল্লি পুলিশ তাকে ভারতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর