কলকাতা: কেন্দ্রীয় বাজেটের পর এবার পূর্ণাঙ্গ রাজ্য বাজেট পেশ করে মধ্যবিত্তের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
শুক্রবার বাজেট প্রস্তাবের পর মাছ, গম, তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কর ছাড় দেওয়ায় দাম কমছে পনির ও ঘুড়ির, দাম কমছে প্যাকিং বাক্সেরও। আয় বাড়াতে পণ্য প্রবেশ কর বসানোর পথেও হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
এবার থেকে ভিনরাজ্য থেকে আসা পণ্যের ওপর কর দিতে হবে।
রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে অর্থ সংস্থানের জন্যই ফের এই কর বসানো হল বলে তিনি বলেন, এর জন্য একটি বিল আনা হবে।
সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে সরাসরি নতুন কোনো করের প্রস্তাব বাজেটে না রাখা হলেও পণ্যের ওপর প্রবেশ কর বসানোর প্রস্তাবের ফলে আখেরে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে এবং সাধারণ মানুষের ওপরই বোঝা চাপবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।
কারণ, ভিনরাজ্য থেকে বহু পণ্য এ রাজ্যে আসে। এর মধ্যে রয়েছে চাল, পেঁয়াজ, ফল, চিনি, গম, ডিম, মাছ, স্টিল, সিমেন্ট, গুড়, পাম তেল ইত্যাদি।
বেড়ে চলা মুদ্রাস্ফীতির চাপে নাজেহাল মধ্যবিত্ত মানুষ। এ কারণেই নতুন রাজ্য সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের পর নতুন সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তারা।
নতুন বাজেট প্রস্তাবেই স্পষ্ট, খরচ বাড়ছে। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের রাজ্য বাজেটে ভ্যাটের পরিমাণ আগের থেকে ১ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩.৫ থেকে ১৪.৫ শতাংশ করেছে রাজ্য সরকার।
স্বাভাবিক ভাবে এর জেরে দাম বাড়তে চলেছে বেশ কিছু পণ্যের। দাম বাড়ছে ১০ লাখ রুপির বেশি মূল্যের গাড়ি, ২৫ হাজার রুপির বেশি দামের টিভি, ২০ হাজার রুপির বেশি মূল্যের মোবাইল, ১৫ হাজার রুপি বেশি মূল্যের ঘড়ি, এক টনের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এসি, দেশি মদ ও জুতোর।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় এও জানান, বর্তমানে যে সব ছোট রেস্তোরাঁ, খাওয়ার জায়গা বা ধাবা, যাদের সারা বছরে বিক্রির পরিমাণ ১৫ লাখ রুপি, তারা ভ্যাট আইন মোতাবেক বিক্রির ওপর ৪ শতাংশ হারে কর দেয়, তাদের এই সীমা বাড়িয়ে ২৫ লাখ রুপি করা হলো।
শিল্পে গতি আনতে এ বারের রাজ্য বাজেটে সব থেকে বেশি বরাদ্দ বৃদ্ধি হয় বিদ্যুতে। শুক্রবার তার বাজেট প্রস্তাবে ৯৪ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন অমিত মিত্র। জোর দেওয়া হয়েছে কৃষিতেও, এছাড়া সংখ্যালঘু উন্নয়ন থেকে শুরু করে পাহাড়, জঙ্গলমহলের উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার অর্থমন্ত্রীর বাজেটকে দশে দশ দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যা, আর্থিক সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়েও সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা না চাপিয়ে উন্নয়নমুখী বাজেট পেশ করা হয়েছে।
শুক্রবার বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের পেশ করা বাজেটের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বামেরা। বাজেটকে অবাস্তব আখ্যা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বাজেটে হতাশ বাম চেয়ারম্যান বিমান বসুও। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে বাজেটকে দিশাহীন বলে মন্তব্য করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
বাজেটের পেশ হওয়ার পর বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র নিজের বাজেটে এমন কিছু পরিকল্পনা এবং প্রস্তাব করেছেন, যা বাস্তবায়িত করা অসম্ভবই শুধু নয়, অবাস্তবও। অনেক ক্ষেত্রেই আগের সরকারের প্রকল্প ও নীতি অনুকরণ করার দায়ে দুষ্ট।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, এ বাজেট থেকে জনগনের সমস্যার কোনো সুরাহা হবে বলে মনে হচ্ছে না।
তবে তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে নিজেদের সরকারের বাজেটের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
বিকেলে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, এই বাজেট উন্নয়নের কোনো সুষ্পষ্ট ছাপ নেই। গ্রাম ও শহরের উন্নয়নের বরাদ্দেরও নির্দিষ্ট উল্লেখ নেই। মোটের ওপর এই বাজেট দিশাহীন।
প্রদেশ সভাপতিরে এই বাজেট প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট, রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্রমশ কড়া অবস্থান নিচ্ছে কংগ্রেস নেতৃত্ব।
উল্লেখ্য, এবারের বাজেটে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৩ লাখ ৩৭১ হাজার ৪৪ কোটি রুপি, যা আগের বারের থেকে ১১.৫৬ শতাংশ বেশি। এবারের লক্ষ্য, ২০০ কোটি রুপি অতিরিক্ত কর সংগ্রহ।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১২
আরডি
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর