ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

রাজ্য সরকারের সংবাদপত্রের কালো তালিকা ঘিরে ক্ষোভ

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১২

কলকাতা : সরকারি গ্রন্থাগারে কোন কোন সংবাদপত্র রাখা যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে রাজ্য গ্রন্থাগার দফতরের সাম্প্রতিক নির্দেশিকায়। আর এই নির্দেশিকা ঘিরে সাংবাদিকসহ সর্বস্তরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।



রাজ্য সরকারের বিশেষ পছন্দের তালিকায় রয়েছে মোট ৮টি সংবাদপত্র। সেগুলি হলো- সংবাদ প্রতিদিন, সকালবেলা, খবর ৩৬৫ দিন, একদিন, দৈনিক স্টেটসম্যান, সন্মার্গ, আখবার-ই-মশরিখ এবং আজাদ হিন্দ।

নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সরকারি গ্রন্থাগারগুলো শুধু এই সংবাদপত্রগুলিই রাখতে পারবে। এর বাইরে অন্য কোনও সংবাদপত্র কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করবে না সরকার। সরকারের পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে রাজ্যের প্রথম সারির একাধিক সংবাদপত্র।

পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকা আনন্দবাজার পত্রিকা, বর্তমান, আজকাল, ইংরাজি খবরের কাগজ দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য টেলিগ্রাফ, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দুর মতো সংবাদপত্রগুলোকে ব্রাত্য করেছে সরকার।

গ্রন্থাগার মন্ত্রী আব্দুল করিম এদিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হবে না।

এই নির্দেশিকাকে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ বলেই মনে করছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিকরা। এই ঘটনাকে সাতের দশকের জরুরি অবস্থার সময় সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা।

কড়া ভাষায় সরকারি নির্দেশিকার সমালোচনা করে সাংবাদিক শিখা মুখার্জি বলেন, ‘এটা এক ধরণের সেন্সরশিপ। ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘থট পুলিশিং’ মানে চিন্তাভাবনার ওপরে এক ধরনের নজরদারি। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা যখন জরুরি অবস্থাকে কালো অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত করি, তখন এই ধরনের নির্দেশিকা নিন্দনীয়। ’

বিশিষ্ট সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি মনে করছেন সংবাদপত্র আটকে দিয়ে উনি পঞ্চায়েত নির্বাচন জিততে পারবেন। কিন্তু মানুষই শেষ কথা বলে। যে সার্কুলার বেরিয়েছে, আমি মনে করি তা মারাত্মক অপরাধ। গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত। সংবিধানের প্রতি আঘাত। ’

সাহিত্যিক সুনীল গাঙ্গুলি বলেন, ‘সরকার নির্দেশিকা জারি করে মানুষকে কোনও কিছু যেমন পড়াতে পারে না, তেমনি কোনও কিছু পড়তে বাধাও দিতে পারে না। সরকারি গ্রন্থাগারের সামর্থ থাকলে তাদের সমস্ত খবরের কাগজই রাখা উচিত। ’

সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য বলেন, ‘ব্যাপারটি অগণতান্ত্রিক, তাই কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। ’

অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন, ‘এই সার্কুলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপ। ’  

অভিনেতা কৌশিক সেন বলেন, ‘যে দলতন্ত্রের বিরোধিতা করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসছে, তারা সেই দলতন্ত্রেরই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করছে। এভাবে কোনও কাগজ পড়া আটকানো যায় না। গ্রন্থাগারে না পেলে মানুষ বাইরে থেকে কিনে পড়বে। ’

তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন বলেন, ‘নীতি নির্ধারণের জায়গায় থাকলে আমি এই সিদ্ধান্ত নিতে দিতাম না। সরকার ক্ষমতা জাহির করছে। তবে আমি এই সরকারকে ফ্যাসিস্ট বলতে পারব না। এটা একটা ভুল রাজনৈতিক পদক্ষেপ। ’

রাজ্যসরকারের তরফে যে সংবাদপত্রগুলো গ্রন্থাগারে রাখার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে তার তালিকায় প্রথমেই রয়েছে সংবাদ প্রতিদিনের নাম। যার সম্পাদক এবং অ্যাসোসিয়েট সম্পাদক দুই জনেই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ।

তালিকাভুক্ত হিন্দি দৈনিক সন্মার্গ এবং উর্দু দৈনিক আখবর-ই-মাশরিখের সম্পাদকও সম্প্রতি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন।

বাংলা দৈনিক সকালবেলা উর্দু দৈনিক আজাদ হিন্দ যে গোষ্ঠী পরিচালনা করে, সেই গোষ্ঠীর মিডিয়া সিইও সংবাদ প্রতিদিনের অ্যাসোসিয়েট সম্পাদক।

বাকি তিনটি বাংলা দৈনিক খবর ৩৬৫ দিন, একদিন এবং দৈনিক স্টেটসম্যানের পরিচালক বা কর্ণধাররাও রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

বিভিন্ন সময় মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সংবাদমাধ্যমকে তার আক্রমণের নিশানা করেছেন। কিন্তু সরকারি নির্দেশিকা জারি করে পছন্দের সংবাদপত্র নির্দিষ্ট করে দেওয়ার ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।

বাংলাদেশ সময় : ২০৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১২

আরডি
সম্পাদনা : আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।