ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

টাকা পাচারকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে ক্ষোভ বিজিএমইএ’র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
টাকা পাচারকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে ক্ষোভ বিজিএমইএ’র বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান

ঢাকা: ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে দশ প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকা পাচার’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের জেরে সংবাদমাধ্যম ও শুল্ক গোয়েন্দা এবং তদন্ত অধিদপ্তরের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ক্ষোভ ও নিন্দা জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বিষয়টিকে ‘মিথ্যা ও অপপ্রচার’ বলে দাবি করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, পোশাক শিল্প যখন জাতীয়, অর্থনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রেখে অদম্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, কেউ আমাদের আটকে রাখতে পারছে না, তখন আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছি, সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের জারি করা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।

আর দেশের প্রধান দৈনিকগুলো বিভিন্ন শিরোনামে তা ছেপেছে, যেমন- ‘পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচার’, 'পোশাক রপ্তানির আড়ালে ১০ কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকা পাচার’। এ ধরনের চিঠি, মিডিয়া রিলিজ, মিডিয়া ক্যাম্পেইন, আসলে কার স্বার্থে করা হয়েছে- এটা আমাদের কাছে একটি বড় প্রশ্ন। আমরা মনে করি এটা আমাদের অর্থনীতি, শিল্প, দেশ অথবা সরকার, কাউকেই কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে নিচ্ছে না। শুধুমাত্র বাধাগ্রস্তই করছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা এখনও তদন্তই হয়নি; সেগুলো নিয়ে সমগ্র শিল্পখাতকে ঘিরে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের ডাকবে, তদন্ত করবে এবং যারা সত্যিকার অর্থে কোনো ধরনের কোনো অসাধু তৎপরতার সাথে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবে- সেই বিষয়টিই প্র্যাকটিস হওয়া উচিত এবং এটিই কিন্তু সব জায়গায় হয়।

উল্লেখিত বিষয়টাকে এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করাটা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রত্যাখ্যান করছি।

সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, যে ১০টি কারখানার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে ৪টি বিজিএমইএ’র এবং দুটি বিকেএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ’র কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বিজিএমইএ’র ৪টি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- ফ্যাশন ট্রেড, প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড ও হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড। বিকেএমইএর দুটি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- পিক্সি নিটওয়্যার লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল-টেক্স (বায়িং হাউজ)। আমরা আমাদের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর কাছে নোটিশ পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি। তারা লিখিত বক্তব্য দিয়েছে।

আমি আবারও বলব, যদি কেউ অভিযুক্ত হন তবে তাদের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথভাবে তদন্ত করেন, প্রমাণ করেন, তারপর তাদেরকে শান্তির আওতায় আনেন। আপনারা এই বিষয়টি ঢালাওভাবে মিডিয়ায় দেওয়ায় সামগ্রিকভাবে শিল্পটি হেয় হয়েছে। যেখানে আমরা এত কিছু করছি, আমাদের সেক্টরের ইতিবাচক বিষয়গুলোকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জন্য- সেখানে এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত স্বার্থান্বেষী মহলকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা বাঞ্ছনীয় মনে করছি।

এই শিল্পের দশজন উদ্যোক্তাকে নিয়ে আজকে কথা হচ্ছে, এদের বাইরে আরও হাজার হাজার উদ্যোক্তা আছেন, তারা তো প্রচণ্ডভাবে হতাশ ও মর্মাহত হয়ে পড়েছেন। আগামীতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। কারণ, এই অভিযোগ তাদেরও স্পর্শ করছে। যেখানে এই শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ দেশের মেহনতি শ্রমিক সরকার ও উদ্যোক্তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তখন এরকম একটি বিষয় কেন, কীভাবে হলো, তা আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীতভাবে জানতে চাই। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য হাই লেভেল টাস্কফোর্স গঠন করে তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছি। এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দিতে বিজিএমইএ প্রস্তুত।

ফারুক হাসান বলেন, পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে কি পরিমাণ অবদান রাখছে, আমি বিনয়ের সাথে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। গত ১০ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩২০ বিলিয়ন ডলার যা টাকার অংকে প্রায় ২৬ লাখ কোটি টাকা। আর গত পাঁচ বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৮৩ বিলিয়ন ডলার যা টাকার অংকে প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। এই টাকাগুলো কিন্তু আমরা রপ্তানি করে আমাদের দেশের মধ্যেই এনেছি এবং এই যে রপ্তানিটা আমরা করতে পেরেছি, এটা কিন্তু সহজ কাজ ছিল না। এর জন্য আমাদেরকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। এর জন্য আমাদেরকে অনেক বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এর জন্য আমাদেরকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক ধরনের চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে।

আজ আমাদের পোশাক শিল্প ৪৭ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র বিলিয়ন ডলার না, এর সাথে জড়িয়ে আছে পাঁচ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান। এর সাথে সম্পৃক্ত আছে বৃহত্তর অর্থনীতিতে আমাদের যে আরও ট্রানজেকশনগুলো আছে সবকিছুই। এই বিষয়গুলো সব সময় গভীরভাবে দেখা হয় না। এই শিল্পের মাধ্যমে যে ক্যাপিটাল ফর্মেশন হচ্ছে, সেটি আরও অনেক সম্ভাবনাময় শিল্পের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, সেখানে তো কাস্টমস কর্মকর্তাদের নাম আসার কথা ছিল, তাদের নাম তো এলো না। আমাদের গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য এটি একটি অপচেষ্টা। আমরা এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবে। আমরা তদন্ত করব, যদি প্রমাণিত হয় যে এই কোম্পানিগুলো এর মধ্যে জড়িত নয়, তাহলে যারা এই চিঠি দিয়েছে, তারা আশা করি এটি সংশোধন করবে।

যে কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেসব কারখানায় ক্রয়াদেশ কমে গেছে। সেখানে যদি শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হয়, তার দায়-দায়িত্ব যারা এটি ছড়িয়েছেন, তাদের নিতে হবে। আমরা এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করার দাবি জানাই। এ জন্য বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ যত ধরণের সহায়তা করা দরকার, তা করতে প্রস্তুত আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩
এমকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।