ঢাকা: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নির্বাচনের পর পুনরায় নেওয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন এতে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা।
তারা বলেছেন, এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
পাশাপাশি মানববন্ধনে জানানো হয়, গৃহীত পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় গ্রহণের ব্যবস্থা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ কথা জানানো হয়। মানববন্ধনটির আয়োজন করেন ‘সকল ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে ফাতিমা আখতার সাথী’।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার আগে ৭২ ঘণ্টা হরতাল-অবরোধ ছিল। যে কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা দূরবর্তী জেলা থেকে যে জেলায় পরীক্ষা হচ্ছিল সেখানে উপস্থিত হতে পারিনি। এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশন বরাবর গত ৮ ডিসেম্বর আবেদন করেছিলাম। এর আগে আমরা পরীক্ষা বাতিল চেয়ে ৭ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। সেই সংবাদ সম্মেলনে আমরা বলেছিলাম, বৈরী আবহাওয়ার এবং অবরোধ চলমান থাকার কারণে দূরপাল্লার কোনো পরিবহনই চলছিল না। মূলত এই কারণেই পরীক্ষা স্থগিত চেয়েছিলাম এবং পুনরায় পরবর্তী তারিখে পরীক্ষা নেওয়ার আবেদন করেছিলাম।
তিনি বলেন, এই অবরোধের কারণে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তিন লাখ ৬০ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার প্রার্থী অংশ নিতে পারেননি। এত পরিমাণ শিক্ষার্থী যে পরীক্ষা দিতে পারেননি, এই দায়িত্বটি কার? আমরা মনে করি এই দায় সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের। কারণ শিক্ষা অধিদপ্তর নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ হয়েছে যে, জাকির স্যার নামের একজন ৪৮ প্রার্থীর কাছ থেকে ৯৮ হাজার টাকা করে অবৈধভাবে নিয়েছেন। আজকের পত্রিকায়ও এসেছে উনি একজন শিক্ষার্থীকে বাসায় নিয়ে গিয়ে মেরে সেই শিক্ষার্থীর ৯৮ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।
ফাতিমা আখতার সাথী আরও বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা দেখতে পেয়েছি প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সারা দেশের ৩ বিভাগের প্রায় ১৮টা জেলার পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় জালিয়াতি করা যায় এমন প্রায় সাড়ে তিন হাজার ডিভাইস উদ্ধার করেছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১১ ঘণ্টা আগে সেসব কেন্দ্রের আশপাশে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এই ঘটনার জন্য জড়িত একজন শিক্ষার্থীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় আমরা এটাও দেখতে পেয়েছি যে, পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে কেন্দ্রে প্রশ্নের সব উত্তর টাকা দিয়ে চুক্তি করা পরীক্ষার্থীর কাছে চলে আসে। এসব শিক্ষার্থী ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা চুক্তিতে পরীক্ষা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এই পরীক্ষা বাতিল করে নির্বাচনের পরে আবার তা দেওয়ার সুযোগ যেন দেওয়া হয়, সেজন্য হাইকোর্টে একটি রিট করব। আমি নিজে এই তিন লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থীর পক্ষে বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিটটি করব। আমরা এজন্য প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড এবং ফটো আইডি কার্ড হাইকোর্টে সাবমিট করব।
মানববন্ধনে পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো হলো—১) প্রথম পর্বের ৩ বিভাগের ১৮ জেলার পরীক্ষা বাতিল চাই; ২) নির্বাচনের পর সুষ্ঠু ও কঠোর নিরাপত্তায় পরীক্ষা চাই; ৩) ডিভাইস ও চুক্তি মুক্ত পরীক্ষা চাই; ৪) জালিয়াতের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার উপযুক্ত শাস্তি চাই; ৫) জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতি চাই।
হারুন উর রশিদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ পরীক্ষার্থী মো. আবু সালেহ খান, আকাশ রয়, আনোয়ার খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
ইএসএস/এইচএ/