ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সভাপতি পদে সরাসরি ছাত্রদের নির্বাচন করার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদল। আগে পদাধিকারবলে উপাচার্য এই পদে মনোনীত হতেন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের মাঠে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওন প্রমুখ।

এ সময় ডাকসু নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে পাঁচটি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে তারা। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও সিনেটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের রাখার বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা, ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার ৬০ দিন আগে বিদ্যমান সিন্ডিকেট প্রতিস্থাপন করে নিরপেক্ষ সদস্য সম্বলিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সিন্ডিকেট তৈরি করা, ভোটকেন্দ্র হল থেকে সরিয়ে একাডেমিক ভবনে করার কথা রয়েছে।

সভাপতি পদ হবে শিক্ষার্থীদের থেকে নির্বাচিত
বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদাধিকারবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাকসুর সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন। কিন্তু এবার সভাপতি পদ সরাসরি শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রদল। তারা বলছে, বিশ্বের বড় বড় বিশ্বিদ্যালয়গুলোয় এই পদটি নির্বাচিত হয়ে থাকে। এছাড়াও নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুটি পদ তৈরি করে একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রদল।

বর্তমানে কোষাধ্যক্ষ পদে উপাচার্য ক্ষমতাবলে একজনকে নিয়োগ দেন। কিন্তু অর্থ সম্পাদক পদেও শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার প্রস্তাবনা দিয়েছে ছাত্রদল। এছাড়া নির্বাহী কমিটিতে নতুন পাঁচটি সম্পাদক পদ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে তারা। পদগুলো হলো ‘মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক’, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক’, ‘জেন্ডার সমতা ও অন্তর্ভুক্তি বিষয়ক সম্পাদক’, ‘গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক’ এবং ‘কর্মসংস্থান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ক সম্পাদক’।

‘স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক’ পদের নাম পরিবর্তন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও ২০২৪’র গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক সম্পাদক’ পদে রূপান্তর করার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রদল। এই পদের কার্যাবলীর নাম অনুযায়ী পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে তারা। ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৭ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গণতন্ত্র, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, সাম্য ও সবার জন্য সমান সুযোগের মত আদর্শসমূহের প্রসার এই পদে নির্বাচিত সদস্য কাজ করবেন।

বর্তমান ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদকে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে একীভূত করার প্রস্তাব দিয়েছে ছাত্রদল। এছাড়াও নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ ১৩ থেকে ১৫টি করে মোট ৩৩টি পদ তৈরির প্রস্তাব রেখেছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এবং কার্যনির্বাহী কমিটির নিয়মিত নির্বাচন নিশ্চিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩-এ যথাযথ সংশোধন আনা একান্ত জরুরি বলে মনে করছে ছাত্রদল।

হল সংসদ ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাবও করেছে সংগঠনটি। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উপদেষ্টা পরিষদে আহ্বায়ক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকবেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন); কোষাধ্যক্ষ; ডিনস কমিটির একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি; সিন্ডিকেটের একজন নির্বাচিত সদস্য (অধ্যাপক ক্যাটাগরি); ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি; ডাকসুর নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত সহ-সভাপতি থাকবেন।

হলের প্রাধ্যক্ষ আহ্বায়ক পদে থাকবেন। এছাড়া জ্যেষ্ঠতা অনুসারে দুজন হাউজ টিউটর; সংশ্লিষ্ট হল অ্যালামনাই সোসাইটির সভাপতি; হল সংসদের নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি (সদস্য সচিবের দায়িত্বে) থাকবেন। গঠনতন্ত্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের একক ক্ষমতা বাদ সংশোধন করে উপদেষ্টা পরিষদের সুপারিশ অনুসারে বর্তমান গঠনতন্ত্র সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সভাপতির একক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে তা নির্বাহী কমিটি এবং প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫
এফএইচ/এমজে