ঢাকা: স্কুল পর্যায়ের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের নিয়ে মুক্তির উৎসবের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ উৎসবে দেশ গড়ার শপথ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শিক্ষা কর্মসূচির অধীন শিক্ষার্থীরা গত বছরের বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন ও অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিল। তাদের নিয়ে আয়োজিত এবারের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করব’।
সকাল ৯টায় ছায়ানটের শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, কবুতর ও বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। পরে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দনের শিল্পীরা।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শপথ পাঠ করান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীর বিক্রম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য। আর স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য-সচিব সারা যাকের। উৎসবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী এবং মফিদুল হক।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমার হয়তো আর মুক্তিযুদ্ধ করতে পারবে না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা যা চেয়েছিলেন, তারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তোমরা যদি তা বাস্তবায়ন কর, তাহলে তা হবে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। তোমার যদি স্বপ্নের স্বাধীন সোনার বাংলা গড়ে তোলো, তাহলে ওপর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তোমাদের দিকে তাকিয়ে বলবেন, ‘থ্যাংক ইউ! থ্যাংক ইউ! নেক্সট জেনারেশন!’
তিনি আরও বলেন, তোমরা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের জন্য কাজ করবে। মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভালো করে জানবে। তাহলে দেখবে তোমার বুক একশ হাত ফুলে উঠবে।
আশালতা বৈদ্য বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি আকুতি, ১৯৪৭ সালের পর থেকে যার নেতৃত্বে বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তোমরা তার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাবে। তোমরা দেশ গড়বে, রক্ষা করবে। শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তোমরাও সেখানে অবদান রাখবে। আশপাশের কান কথাকে কানে নিও না। দেশের জন্য যেন তোমরা পরিচালিত হও।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বলেন, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে মিলিত হয়ে আমি আনন্দিত। আজ ১৯৭১ এর রণাঙ্গনের কথা মনে করি, অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছি। আমি সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলাম। বর্তমান প্রজন্মকে বলব, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হবে। তবে এখানে আমাদের জাতীয় পর্যায়ে বিরাট ঘাটতি রয়েছে। দেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভোলার প্রবণতা লক্ষ্য করি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর গবেষণা, চলচ্চিত্র দেখি না। বইমেলায় যান, মুক্তিযুদ্ধের বই পড়তে অনীহা। কারণ তারা ইতিহাস জানে না। মনে হয়, যেন দেশ হাওয়ায় স্বাধীন হয়েছে। ’
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, ‘আমাদের বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হারালে দেশ পাকিস্তানি ভাবধারায় চলে যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে কুণ্ঠাবোধ করলে বাংলাদেশে থাকার অধিকার নেই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৪
এইচএ/