ঢাকা, সোমবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, সমস্যা অগ্রাধিকার নির্ধারণ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
‘আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, সমস্যা অগ্রাধিকার নির্ধারণ’ ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯’ বিষয়ক জাতীয় কর্মশালায় অতিথিরা

ঢাকা: সরকারের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে, তবে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করাই সমস্যা বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বুধবার (১০ এপ্রিল) ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯’ বিষয়ক জাতীয় কর্মশালায় এ মন্তব্য করেন তিনি।  

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, শিশুদের বিষয় সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ।

 প্রধানমন্ত্রী শিশুদের বিষয়ে সবসময় গুরুত্ব দেন। আমরা আশা করছি যতদ্রুত সম্ভব সারাদেশে স্কুল মিড ডে কর্মসূচি চালু করতে। আমরা ব্যয় বহন করতে পারবো।  আগে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে।  

সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সম্পদ বিতরণে টানাপড়েনের মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের আর্থিক সক্ষমতা থাকলেও অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকার নির্ধারণে সমস্যা আছে। এটি নির্ধারণে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। স্কুল মিড ডে মিল চালু করার ব্যাপারে বলবো ভালো প্রকল্প নিয়ে আসুন। আমরা অনুমোদন করবো।
  
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯ বিষয়ক জাতীয় কর্মশালা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হয়।  কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি রিপ্রেসেন্টেটিভ রিচার্ড রিগ্যান ।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, এই নীতিমালা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্কুল মিল সাধারণ খাবার নয়। একে বিবেচনা করতে হবে পুষ্টিমানের বিবেচনায়। এটি শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করবে। এর ফলে আগামীতে একটি সুস্থ জাতি পাবো।  

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যদি পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে আট হাজার কোটি টাকার কর্মসূচি গ্রহণ করেন এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে।  এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ সহযোগিতা করবে। তবে পুষ্টিকর রান্নার ব্যাপারে মায়েদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং বলেন, এই উদ্যোগ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এই বিনিয়োগের কোনো ক্ষতি নেই।  এই বিনিয়োগ করলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়বে। প্রয়োজন হলে আমরা মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করবো সারা দেশের স্কুলে মিড ডে মিল চালু করার ব্যাপারে।  

প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে ঝরে পরার হার কমছে। স্কুল মিড ডে মিল চালু করা গেলে ঝরে পরা আরও কমবে। এই কর্মসূচি সবাই মিলে বাস্তবায়ন সম্ভব।  আশা করি দ্রুত এই নীতি অনুমোদিত হবে।

২০০১ সালে মিড ডে মিলের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে দেশের ১০৪টি উপজেলায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ৯৩টি উপজেলা এবং ১১টি উপজেলায় ডব্লিউএফপি (বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি) পরিচালনা করছে।  এর মধ্যে তিনটি জেলায় বিদ্যালয়ের শিশুরা রান্না করা খাবার পাচ্ছে। ২৯ লাখ শিশু স্কুল মিড ডে মিলের আওতায় পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট পাচ্ছে। তবে সারাদেশে রান্না করা খাবারের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন পড়বে বিশাল কর্মসূচির। ২ কোটি ৪০ লাখ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। শিক্ষার্থী প্রতি ১৬ টাকা করে খরচ পরবে।

এই কর্মসূচির লক্ষ্য প্রাক- প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী দেশের সব শিশুকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে স্কুল মিল নীতির আওতায় এনে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি,স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় যথার্থ অবদান রাখা। এই কার্যক্রম শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধিসহ গ্রাম ও শহর, ধনি ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে শিক্ষার মানের পার্থক্য দূরে সহায়ক হবে। শিশুদের সাময়িক ক্ষুধা নিবারণ ও পুষ্টি সহায়তার স্থায়ী কর্মসূচি হিসেবে শিক্ষার্থীদের মেধার উৎকর্ষ সাধন, চিন্তা ও কল্পনাশক্তির বিকাশ, সৃজনশীলতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিপূর্বক তাদের দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদে পরিণত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখা।

জাতীয় স্কুল মিল নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে দুর্গম চর, হাওর, উপকূলীয় অঞ্চল, পার্বত্য এলাকা, চা বাগানসহ পিছিয়ে পড়া এলাকাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রতিদিনের শক্তি চাহিদার ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে নিশ্চিত করতে হবে।  

বিশেষজ্ঞ আলোচনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, এই কর্মসূচিতে বিশেষ করে অভিভাবকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষকদের রান্নার কাজে যুক্ত করা হলে পাঠদানে অসুবিধা হতে পারে। এটি পর্যায়ক্রমে করতে হবে।  একবারে করা সম্ভব না। তবে স্কুলগুলোতে বিস্কুট বিতরণে সাফল্য পাওয়া গেছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি রিপ্রেসেন্টেটিভ রিচার্ড রিগ্যান বলেন, আমি এর আগে আফ্রিকা, উত্তর কোরিয়াতে এ ব্যাপারে কাজ করেছি। সেখানে আমাকে বলা হয়েছে শিশুদের বিদ্যালয়ে খাবার দেওয়ার ব্যাপারে কর্মসূচি চালিয়ে নিতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। কিন্তু বাংলাদেশে এ ব্যাপারে ব্যতিক্রম।  স্কুলে শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ব্যাপারে এ দেশের সাফল্য আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা বিশেষজ্ঞ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দাবি করবো সরকার এ কর্মসূচি পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে সমর্থন করবে। এটা শিক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজন।  এটি সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে। এখন বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যে বাংলাদেশ বছরের শুরুর দিনের বই তুলে দিতে পারে সেই বাংলাদেশ কেন শিক্ষার্থীদের কাছে দুপুরের খাবার দিতে পারবে না। আমরা বিশ্বাস করি স্কুল মিল কর্মসূচি সরকারের অর্থায়নে করা সম্ভব। এটি ধাপে ধাপে হতে হবে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সম্পৃক্ত হতে পারে পারে। এক ডলার বিনিয়োগ করলে আঠারো ডলার রিটার্ন পাওয়া যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯ 
আরএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।