ঢাকা: চলতি বছর মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা চালু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে কেউ আবেদনে ভুল করলে তা আর সংশোধনের সুযোগ থাকছে না।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইতিবাচক সাড়া পেলে অন্যান্য দেশেও এ কার্যক্রম প্রসারিত করা হবে। গত ১৮ মে ইসির টিম দেশটিতে গিয়ে প্রশিক্ষণসহ নানা কারিগরি দিক শেষ করেছেন। দূতাবাস এ লক্ষ্যে লোকবল নিয়োগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে আবুধাবি এবং দুবাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের দুটি টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৭০০ জনের মতো নাগরিক তাদের ছবি তুলে, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিয়ে নিবন্ধন করেছেন।
এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর বাংলানিউজকে বলেন, আরব আমিরাতে যারা তথ্য দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করছেন, তাদের আবেদন যাচাইয়ের জন্য একটি কিমিটি কাজ করবে। সেই কমিটির যাচাইয়ের টিকলেই কেবল এনআইডি পাবে। এক্ষেত্রে কারও আবেদনে কোনো কারণে ভুল হলে বা পর্যাপ্ত তথ্য দিতে না পারলে তাকে দেশে এসে স্বশরীরে ফের আবেদন করতে হবে। কেননা, এনআইডি পেতে করা আবেদনের ভুল সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমিরাতে সবকিছু ঠিকঠাক মতোই হচ্ছে। আমরা ৪০টি দেশে এ কার্যক্রম শুরু করার কথা ভাবছি। তবে ধারাবাহিকভাবে কার্যক্রমটি শুরু করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে প্রবাসীদের আধিক্য অনুযায়ী।
পুরো কার্যক্রমের বিষয়টির ব্যাখ্যা করে সিস্টেম ম্যানেজার মো. আশরাফ হোসেন বলেন, প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এরপর দূতাবাসের নির্দিষ্ট ডেস্কে এসে ছবি তুলে, ফিঙ্গার ম্যাচসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তখন এটি আবেদনকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদনটি চলে যাবে। তিনি আবেদনকারী দেওয়ার তথ্যাবলী তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবেন। এক্ষেত্রে সত্যতা পেলে তার আবেদনটি অনুমোদন হয়ে যাবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মোবাইলে মেসেজ চলে যাবে। মেসেজ পাওয়া লিংকে ক্লিক করেই তিনি বিদেশে বসেই নিজের এনআইডি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এরপর স্মার্টকার্ড প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
প্রথমবার কোনো ফি নাগরিকদের না দিতে হলেও দূতাবাসকে এনআইডি প্রতি ৫০ দিরহাম সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। আবেদনকারীর নাম হতে হবে জন্ম নিবন্ধন অথবা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী। এছাড়া প্রবাসী বলতে বৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকরাই কেবল এই সেবা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে এ উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ইউএই প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।
সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে কার্যক্রম শুরু হওয়া ছয়টি দেশ থেকে ভোটার হয়ে এনআইডি পেতে গত মার্চ পর্যন্ত আবেদন করেছেন পাঁচ হাজার ১৩৮ জন। এদের মধ্যে চার হাজার ৬১০ জনের আবেদন সে সময় পর্যন্ত তদন্তই করেনি ইসি। তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৪৭৫ জনের, এর মধ্যেও আবার নানা কারণ দেখিয়ে ২০৩ জন প্রবাসীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। সেই কার্যক্রম আর হালে পানি পায়নি।
বিদেশে এনআইডি কার্যক্রমের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল ইসি। চলতি বছর এর মধ্যে ৪০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২৩
ইইউডি/এমজে