ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

প্রবাসে এনআইডি: ‘বিশেষ কমিটি’ আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৩
প্রবাসে এনআইডি: ‘বিশেষ কমিটি’ আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ

ঢাকা: প্রবাসে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রমে রোহিঙ্গা ঠেকাতে এবার ‘বিশেষ কমিটি’ আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিটির সংস্কার, সম্মানি দেওয়ার উদ্যোগ যেমন নিচ্ছে সংস্থাটি, তেমনি সন্দেহ হলেই আটকে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদন।

ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধনপূর্বক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনাও দিয়েছেন।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী পোর্টালে দাখিলকৃত আবেদন বিশেষ এলাকা হিসাবে খ্যাত চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি হওয়ায় কমিশনের অনুমোদনক্রমে ওই অঞ্চলের জন্য-
(ক) বিদ্যমান ‘বিশেষ কমিটি’ সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ;
(খ) সংশ্লিষ্ট কমিটির কার্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য কমিটির আপ্যায়নসহ কমিটির সদস্যবৃন্দের জন্য সম্মানি প্রদানের নিমিত্ত বাজেট সংস্থান রাখা;
(গ) বিশেষ কমিটি কর্তৃক মাসে কমপক্ষে দুটি সভা আহ্বানের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে ওই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পত্র প্রেরণ।

সন্দেহভাজন প্রবাসী (রোহিঙ্গা):
এক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের রেজিস্ট্রেশন অফিসার (সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার) কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুপারিশ আমলে নিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। অর্থাৎ সরেজমিন যাচাইকালে যদি আবেদকারী ভোটারযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলেই কেবল তার ডাটা দূতাবাস থেকে আপলোড করতে হবে, অন্যাথায় নয়।

রোহিঙ্গারা সমতলে ছড়িয়ে পড়ায় ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি উপজেলা/থানাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করেছে।

ওই ৩২টি উপজেলা/থানার ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের নিবন্ধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ‘বিশেষ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির যাচাই-বাছাই এবং সুপারিশপ্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়।

এই অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ এলাকাভুক্ত ৩২টি উপজেলা/থানার বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য ভোটার নিবন্ধনের আবেদনগুলির তদন্ত এবং বিশেষ কমিটির যাচাই-বাছাই কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে সম্পাদন ও কমিটিকে আরও সক্রিয় করতে এবার সম্মানিও দেওয়া হবে। তবে সম্মানির আকার এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

জানা গেছে, সম্প্রতি কার্যক্রম শুরু করার পর আবুধাবিতে এ পর্যন্ত এনআইডি পাওয়ার জন্য মোট পাঁচ হাজার ৯০ জন ব্যক্তি আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে চট্টগ্রামে, দুই হাজার ৩২১টি। এরপরে কুমিল্লা থেকে আবেদন পড়েছে এক হাজার ২৩৫টি। ঢাকায় আবেদন পড়েছে ৪৭৭টি। সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে রংপুর থেকে ৩৪টি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত আবেদন অনুমোদন হয়েছে এক হাজার ২০৪টি। তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ৩৯৪টি।

এছাড়া ৫৭৯টি আবেদন বাতিল করা হয়েছে। আবেদনকারীদের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে দুই হাজার ৯১৩টি আবেদন।

সবচেয়ে বেশি আবেদন বাতিল হয়েছে কুমিল্লায় ২৪৯টি, এরপরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবেদন বাতিল হয়েছে চট্টগ্রামে ১১৮টি। ঢাকায় বাতিল হয়েছে ৭০টি আবেদন।

২২ আগস্ট পর্যন্ত আঙুলের ছাপ দিয়েছেন তিন হাজার ৭৯১ জন। এদের মধ্যে এনআইডি পেয়েছেন ৩৩৬ জন। পুনরায় আবেদন করেছেন নয় জন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে এই উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ইউএই প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।

সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সতত্যা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। ভবিষ্যতে আরও ৪০টি দেশে এনআইডি সেবা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৩
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।