ঢাকা: নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে অনেক সময় একজন কর্মকর্তা (কেবল নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা) থাকলে অনেকেই সেখানে প্রভাব বিস্তাব করে। এই চাপ অতিক্রম করা কঠিন হয়ে পড়ে।
নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজস্ব কর্মকর্তাদের এখতিয়ার কমিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে ডিসি-এসপিদের রাখার বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, আইনে বলা আছে নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রণয়ন করবে। যখন তফসিল ঘোষণা হবে তখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তালিকা দেবে। কাকে দিয়ে তালিকা করাবে সেটা কমিশনের ব্যাপার। এতোদিন ট্রেডিশনালি যেটা হয়ে আসছিল ভোটকেন্দ্রের তালিকা, অতীতের তালিকা ফলো করে কিছু যোগ বিয়োগ করা হতো।
তিনি বলেন, এটার একটা নীতিমালা আছে যে কোথায় ভোটকেন্দ্র করা যাবে, কোথায় করা যাবে না। সেটা নীতিমালা অনুযায়ী এটা এক সময় জেলা প্রশাসক করতো, আমরা যখন চাকরি করতাম। এরপর যখন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেওয়া হলো তখন উনার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক করতেন। এরপর উপজেলা ও জেলায় নির্বাচন কর্মকর্তা থাকায় তাদের দিয়ে করা হতো। এখন আমরা যখন জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলি, তখন তারা কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলেছিলেন।
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক দূরে যেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু কাছাকাছি ভোটকেন্দ্র করলে অনেক কেন্দ্র হয়। সে অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই ভোটকেন্দ্র কমিয়ে যদি বুথের সংখ্যা বাড়ানো যায়, তাহলে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো যাবে। দুই নম্বর বিষয় হলো আমাদের কর্মকর্তা থাকলে ভালো হবে এটা আমরা মনে করি না। ভালো হতে পারে, মন্দও হতে পারে। আমরা বিবেচনা করে দেখলাম স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) আরো আছে, তাদের সাথে নিয়ে কাজটা করলে আরো ভালো হবে। তখন আমরা শিক্ষা বিভাগকে নিলাম, কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের। কাজেই সবাইকে নিয়ে কমিটি করলে একক কোনো ব্যক্তির প্রভাব থাকবে না।
মো. আলমগীর আরো বলেন, আমরা ভোটকেন্দ্র করার সময় অভিযোগ পাই। একজন কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দেওয়া থাকলে অনেকেই সেখানে প্রভাব বিস্তাব করে। তারা চাপে মুখে থাকে। বাস্তবতা হলো এই চাপ অতিক্রম করা কঠিন হয়। চাপ সহ্য করতে গেলে অনেক সময় তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এজন্য চাপ যাতে না হয়, চাপ যাতে না দিতে পারে এবং ন্যায় সঙ্গত ভোটকেন্দ্র যাতে হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পুলিশ, শিক্ষা ও আমাদের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। এতে একক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। এছাড়া এতোগুলো কর্মকর্তার ওপর চাপ প্রয়োগ করাও সম্ভব হবে না। আবার তারা তালিকা করার পর অভিযোগ আসলে তা শুনানির পর চূড়ান্ত হবে।
তিনি আরো বলেন, এই ভোটকেন্দ্রের একটা ডাটাবেজ করা হবে। কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও এগুলো ব্যবহার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময়ও আবার চূড়ান্ত করা হবে। কারণ অনেক কেন্দ্র পরিবর্তন করতে হবে। প্রাকৃতিক কিংবা অন্য কারণে কেন্দ্র করার অনুপযোগী হতে পারে।
প্রথম শর্ত বিদ্যামানটা বহাল রাখতে হবে। তবে নতুন ভবন হলে, বা পাশে নতুন একটি কলেজ হলে কিংবা প্রাকৃতিক কারণে অনুপযোগী হলে নতুন করে কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। কাজেই ডাটাবেজ থেকে কোনটা ব্যবহার করবো, কোনটা করবো না, তা নির্বাচন আসলে চূড়ান্ত করা হবে।
মাঠ কর্মকর্তাদের নির্ভুল ভোটার তালিকা দেওয়ার জন্য কেন বলা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কারণ ত্রুটি থাকতে পারে। বাবার নামে আকারে ভুল, আবার মায়ের নামে হ পড়ে নাই, এমন হতে পারে। এই সমস্ত আবেদন যেগুলো আছে, অর্থাৎ নিজ উদ্যোগে নয়, যেগুলো আবেদন আছে যে ঠিকানা পরিবর্তন, জন্ম তারিখ সংশোধন, পোস্ট কোড ভুল ইত্যাদি আবেদন ঠিক করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
প্রতিদিন ভোটার হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকবে। যখন তফসিল দেবো আমরা ঘোষণা দেবো যে এই তারিখের পরে যারা ভোটার হবে তারা এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
ইইউডি/এমএম