ঢাকা: নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা সবার দায়িত্ব। আমাদের যেমন দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব আরও বেশি।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান তাদের এমন আহ্বান জানান।
দলগুলোর উদ্দেশে কী বার্তা আপনাদের এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের আবেদন থাকবে নিবন্ধিত ৪৪টি দল, সবাই যেন অংশগ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয়, ছোট-বড় দল নয়; সবার প্রতিই আমাদের এ আহ্বান। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে সবাই যেন নির্বিঘ্নে সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। সেই আহ্বান ব্যক্তিগত এবং কমিশনের আহ্বান নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করুন।
রাজনৈতিক সমঝোতা নেই, এ অবস্থায় ভোটের জন্য পরিবেশ অনুকূল কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা কেন সমগ্র দেশবাসী চায় সমঝোতা। কারণ কেউ আশঙ্কার মধ্যে থাকতে চায় না, যে আগামী দিনে কী হবে। আমরা নিঃসংকোচ চিত্তে থাকতে চাই যে রাজনৈতিক সমঝোতা হবে। এটা দেশ ও জাতির জন্য ভালো। আমরা আমাদের কাজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। শুধু মাত্র আমরা স্ট্যাম্প প্যাড সংগ্রহের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। এখন রাজনৈতিক বিষয়টি তো আমাদের মধ্যে আসে না। এটা দেশ ও জাতিগতভাবে আমরাও চাইবো যেন সমঝোতা হয়, এতে আমরা নিঃসংকোচ চিত্তে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।
সমঝোতা না হলে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে তা কেউ বলতে পারছি না। আমরা চাই যে একটা ভালো পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। যেটাই হোক, আমাদের একার কিছু করার থাকবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সমঝোতা হলে এক রকম হবে, না হলে পরিস্থিতি আরেক রকম হবে। এখনই আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে যে যেটাই বলুক পরিস্থিতির উন্নতি হবে এটাই আশা করি আমরা। পরিস্থিতি কী হবে তা তো বলতে পারছি না। পরিস্থিতি ভালো না, সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। কাজেই এটা এখনই আমরা না বলি, কী হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আনিছুর রহমান বলেন, আমরা চিন্তা করছি, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি পরিস্থিতি একটা সমঝোতা দিকে যেতে পারে, যদি না যায়, তখন বিবেচনা করা হবে...। দলগুলোর সঙ্গে আমাদের যে আলোচনার দরকার ছিল তা আমরা শেষ করেছি। এখন তো আর সেই সময় নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো একটা সমঝোতার দিকে যাক। আমরা দেশ ও জাতি হিসেবে পেছন দিকে যেতে চাই না। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার, সেটা সবার দায়িত্ব। আমাদের যেমন দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব আরও বেশি। তারা মাঠে থাকবে, তাদের জনগণের কথাও চিন্তা করা উচিত। দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করা উচিত।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বাধা বিপত্তির পরিস্থিতি দেখছি না। এখনো অনেক সময় আছে। বড় ধরনের কোনো বাধা দেখছি না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেটা আছে সেটা সমঝোতা হতেও পারে। আবার নাও হতে পারে, তখন পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। সে সময় পরিবেশ কী থাকে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ থাকে, কি না থাকে সেটা তো এখনই বলতে পারবো না। সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দেখা যাক।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, তফসিল আমরা যথাসময়েই দেবো। যথেষ্ট সময় আছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের কথা বলেছিলাম আমরা, সেটা যে প্রথম সপ্তাহেই স্ট্রিক্ট থাকতে হবে, এমন নয়। তবে নভেম্বরের কোনো একটা সময় দেবো।
যথা সময়ে নির্বাচন না হওয়ার কোনো শঙ্কা করছেন কি এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর বলেন, না না। এ শঙ্কা তো করছি না। যখন ভোট করবো তখন বিষয়টি আসবে। পরিস্থিতি বুঝে জিনিসটা বলবো। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবো। কোনো বাধা দেখছি না। আমরা সবকিছুই তো করছি। প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে উপকরণ কেনা, সব কাজ এগিয়ে রাখছি তো নির্বাচনকে সামনে রেখেই।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। নির্বাচন না হলে কী সেটাও আপনারা জানেন। কাজেই এটা আমরা এখনই বলতে পারবো না। বাধা বা কোনো কিছু সৃষ্টি হলো তখনই আমরা বলতে পারবো।
ভোটারদের কী বার্তা দেবেন ভোটের-আগে পরে পরিবেশ শান্ত রাখার বিষয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে গেলে কেউ বাধা দিতে পারবে না, এটা আমরা প্রচার প্রচারণা করে থাকি। এনআইডি থাকলে কেউ ভোটার হয় না; তফসিলে আগে, পরে, ভোটের আগে-পরে করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে প্রচার করতে হয় আমাদের। ভোটের পরেও আমরা শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য ১৫ দিন যাতে নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে থাকে সেই প্রস্তাব রেখেছি। প্রয়োজনে সেটাও ব্যবহার করবো।
শুধু কী পুলিশ থাকবে নাকি অন্য বাহিনীও থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞার (সশস্ত্র বাহিনী ব্যতিত সব বাহিনী) মধ্যে যারা পড়ে তারাই। সংজ্ঞা আমাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আছে। নির্বাচনকালীন কতদিনের জন্য মোতায়েন করবো আমরা করবো। এটা আমাদের পরিকল্পনায় রেখেছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে, যদি প্রয়োজন হয় সহিংসতা যাতে ঠেকানো যায়।
আরপিওতেই নির্বাচনের ১৫ দিন পরেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে নিয়োজিত রাখা যাবে, কতদিন রাখবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়োজনে ১৫ দিন। যদি প্রয়োজন হয়। আরপিওতে আছে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছি। নির্বাচনের পরেও যাতে সহিংসতা এড়ানো যায়, আমাদের সেই প্রস্তুতিও থাকবে।
কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের কারণে তফসিল ঘোষণা কী ১২ নভেম্বরের পরে যেতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তফসিল তো আমরা দিয়ে দেবো। সরকারের বিষয়টা আমরা জানি না। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২৩
ইইউডি/আরআইএস