ঢাকা: একদফা দাবিতে আন্দোলনরত দল বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আপনারা নির্বাচনে আসুন। অংশগ্রহণ করে সফল হোন।
শনিবার (০৪ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংসদ নির্বাচনের শেষ সংলাপ সমাপ্তির পর তিনি এই আহ্বান জানান।
সকাল ও বিকেলে দুই দফার সংলাপে ৪৪টি দলের মধ্যে বিএনপিসহ ১৮টি অংশ নেয়নি, ভবিষ্যতে তারা আসবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সব সময়ই বলে এসেছি, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক। আমরা আমাদের নির্বাচন করব। তাদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকবে আপনারা আসুন। কীভাবে আসবেন সেই কোর্স তো আমরা চার্ট করে দিতে পারব না। আপনারা আসুন। আমাদের শুভকামনা থাকবে। আপনারা অংশগ্রহণ করে সফল হোন, সেই শুভ কামনা আমাদের থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা সংসদ নির্বাচনকে উপলক্ষ করেই এই সভার আয়োজন করেছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যে এ যাবৎ যে প্রস্তুতিগুলো নিয়েছি, সেগুলো দলগুলোকে অবহিত করা, তাদের মতামত গ্রহণ করা এবং আমাদের মতামত জানানো। আলোচনা যেটা হয়েছে, মোট ২৬টি দল অংশগ্রহণ করেছে। আলোচনা যথেষ্ট ইতিবাচক ছিল। তারপরও অনেকেই বলেছেন নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়, কেউ কেউ বলেছেন, খুব বেশি না। অধিকাংশই আমাদের অবস্থানটা বুঝেছেন।
সিইসি বলেন, কিছু কিছু দল এখনো আলোচনায় অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি যে, পরিবেশ অনুকূল, প্রতিকূল হওয়ার বিষয়টা আপেক্ষিক। আর রাজনৈতিক যে সংকটগুলো আছে, আমরা বলেছি সেগুলো সম্পর্কে আমাদের প্রত্যাশা সব সময়ই ইতিবাচক। কিন্তু সেই সংকট নিরসন করার সামর্থ্য আমাদের নেই বা আমাদের যে ম্যান্ডেটও নেই।
তিনি বলেন, আমরা সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের বলেছি, আপনারাও নিজেদের মধ্যে চেষ্টাটা করতে পারতেন। আমাদের রাজনীতিতে এসে নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন। অথচ আপনারা দিতে পারছেন না। আপনারাও তো রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এই দায়িত্বগুলো নিতে পারতেন। বারংবার চেষ্টা করতে পারতেন। নিজেদের মধ্যে সংলাপ করে একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারতেন। এভাবেই কিছু কিছু আইনি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সিইসি বলেন, সভায় আমরা ডিজিটাল পদ্ধতি করতে চাচ্ছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে। একটা প্রযুক্তি (নির্বাচনি অ্যাপ) তাদের অবহিত করা হয়েছে। নির্বাচন প্রশ্নে তাদের যে দায়িত্ব অনেকেই মনে করেন, কেউ কেউ, সকলে না; নির্বাচন কমিশন এককভাবে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেবে। অনেকেই বলেছেন নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য অত্যন্ত সীমিত।
তিনি বলেন, আমরা বুঝি আমাদের সামর্থ্য সীমিত। আমরা নির্বাচন আয়োজন করব। নির্বাচন পরিচালনার যে দায়িত্ব, সেটা আমাদেরকে হস্তান্তর করে দিতে হয়। সেখানে যাদের কাছে আমরা হস্তান্তর করব, তাদের ওপর আমাদের নজরদারি থাকবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় নজরদারি থাকতে হবে রাজনৈতিক দলের এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের। যদি দলীয়ভাবে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে কার্যকরভাবে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে প্রতিটি আসনে ১৫০ কেন্দ্র হোক, আড়াইশ কেন্দ্র হোক, সেখানে অতি অবশ্যই পোলিং এজেন্ট দিতে হবে। পোলিং এজেন্ট দিয়ে স্ব স্ব স্বার্থরক্ষা করতে হবে।
সিইসি আরও বলেন, আমরা বলেছি, পোলিং এজেন্ট যদি পারচেজ হয়ে যায়, আমাদের করার কিছু থাকবে না। পোলিং এজেন্ট যদি আপনাদের প্রোটেক্ট করতে না পারে, আমরা কিন্তু আপনাদের প্রোটেক্ট করতে পারবো না। আমরা বৈঠকে ইন্টারেক্ট করেছি, যাতে আগামী নির্বাচনটা সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সকলের সক্রিয় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ হয়। আমি এককভাবে সবকিছু ঠিক করে দেব, তা নয়। তাদেরকেও স্ব স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তারা যদি দায়িত্ব পালন করেন, আশা করি সকলে উজ্জীবিত হবেন, উদ্বুদ্ধ হবেন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনেকে আগ্রহী হবেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, আমাদের স্পেস এবং টাইমটা খুব সীমিত। আমরা কিন্তু অনেক বেশি স্পেস নিয়ে কাজ করতে পারি না। আমাদের জন্য সংবিধানে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। আমাদের পাশেও খুব বেশি স্পেস নেই, সামনেও খুব বেশি স্পেস নেই, পেছনেও খুব বেশি স্পেস নেই।
নির্বাচন কমিশন নভেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৩
ইইউডি/এসএএইচ